অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ৫ই মে ২০২৪ | ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


আবু আফজাল সালেহ: মননশীলতার পথিক


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৪শে এপ্রিল ২০২৩ বিকাল ০৫:৩২

remove_red_eye

১৩৭

আমিনুল ইসলাম

আত্মসমালোচনার পথ ধরে বলতে হয়, যে-বাঙালি মানুষ হিসেবে বেশ সৃজনশীল কিন্তু মননশীলতায় তার দারিদ্র্য হতাশ করার মতো প্রকট। কবিতা রচনায় বাঙালি টেক্কা দিতে পারে যে-কোনো ভাষার মানুষের সাথে; ছোটোগল্প-উপন্যাস রচনাতেও তার অগ্রগতি কম নয়। কিন্তু সমালোচনা সাহিত্য? প্রবন্ধ সাহিত্য? বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ? সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের তুলনায় এসব ক্ষেত্রে বাঙালির অর্জন মাঝারি বা নিম্নমানের। বাংলার জলবায়ু, আবহাওয়া, ভূগোল ও মাটি ইত্যাদি আবেগ জাগানিয়া সৃষ্টিশীলতার আনুকূল্য ধারণ করে আছে। অধিকন্তু বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস প্রতিবাদ আর বিপ্লবের এবং সেও সৃজনশীলতার সহায়ক। বাঙালি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মসমূহের প্রচলনের বহু আগে থেকেই মূলত পূজারি জাতি। সূর্য, সমুদ্র, বৃক্ষ, পাহাড়, পর্বত, জীবজন্তু ও পাখপাখালির পূজা করে এসেছে সে ভয় ও কৃতজ্ঞতা থেকে। পরে যোগ হয়েছে অতিপ্রাকৃত শক্তি ও দেবদেবীর পূজা। আবার বছরের পর নানাজাতি দ্বারা শাসিত ও শোষিত হওয়ার ফলে এস্টাব্লিশমেন্টকে ঘৃণা করা এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সংগ্রাম ও যুদ্ধ করার মনোভাব তার স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

সময়ের বিবর্তনে নানাবিধ ধর্মীয় ভেদাভেদও তাকে বহুভাবে বিভক্ত ও বিভাজিত করেছে। ফলে তার মানসিক অবস্থান ‘নিরপেক্ষ’ থাকার পর্যাপ্ত বা প্রয়োজনীয় সুযোগ পায়নি, প্রেরণা পায়নি। ফলাফল এই যে, সে কাউকে পক্ষের, কাউকে বিপক্ষের ভাবতে, সেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে এবং তাতেই আনন্দলাভে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। বাঙালি সত্যিকার অর্থেই একটি শংকর জাতি। বাঙালি একটি বহুধা বিভক্ত জাতি। সে নৃতাত্ত্বিকভাবে বিভক্ত। সে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভক্ত। সে ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত। সে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। তার দিন বিভাজিত। তার রাত বিভাজিত। তার প্রেম বিভাজিত। তার দৈনন্দিনের শব্দ ও সম্বোধন বিভাজিত। তার প্রার্থনা বিভাজিত। তার নেতা বিভাজিত। তার আইকন বিভাজিত। তার প্রত্যাশা বিভাজিত। তার জাগরণে বিভাজন। তার ঘুমে বিভাজন। তার স্বপ্নে বিভাজন। তার দুঃস্বপ্নে বিভাজন। আর এই বিভক্তি ও বিভাজন দাঁতাল ও সংঘর্ষমূলক। এই বিভক্তি, এই বিভাজন–তার মননশীলতাকেও প্রভাবিত করেছে এবং অবশ্যই নেতিবাচকভাবে। কিন্তু মননশীলতার চর্চা চায় পক্ষপাতমুক্ত বস্তুনিষ্ঠ মন।

বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে এ যাবত লিখিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ-কলাম সমূহের বড় অংশটাই বিভাজিত মন ও মননের সৃষ্টি, ফলে সেসবের মাঝে আবেগ পাওয়া যায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, যুক্তি মেলে রাজনৈতিক টকশোর মতো কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন জোটে কম। পশ্চিমবঙ্গের কোনো প্রাবন্ধিক তার বাংলা সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধে বাংলাদেশের লেখকদের কথা উল্লেখ করার দরকার বোধ করবেন না। বাংলাদেশের কোনো কবিতার আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গের প্রাবন্ধিকের মতো পুরোপুরি একচোখা না হলেও বাংলাদেশের লেখকদের প্রতি তার পক্ষপাত থাকবে। প্রাবন্ধিক বাম রাজনীতিতে বিশ্বাসী হলে তিনি ডান ঘরানার লেখকের শিল্প-উত্তীর্ণ সৃষ্টিকে প্রগতিবিরোধী বলে উপেক্ষা করবেন। রবীন্দ্রভক্তরা নজরুলকে খারিজ করে রাখবেন। নজরুলভক্তরা রবীন্দ্রনাথকে ছোটো করবেন প্রাণপণে। শামসুর রাহমানকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আল মাহমুদকে গালিগালাজ করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন। আল মাহমুদকে নিয়ে লেখার সময় শামসুর রাহমানকে তাঁর ন্যায্য ক্রেডিট থেকে বঞ্চিত করবেন। কেউ কেউ লেখকের পেশা দেখেও রায় দেবেন। অধিকন্তু সমালোচনা সাহিত্য বা অন্য ধরনের প্রবন্ধ লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তুলনামূলক বৈশ্বিক জ্ঞান থাকার শর্তটি পূরণের ঘাটতি তো বরাবরই প্রকট। এমন অবস্থার কারণেই কবির মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যাধিক্যের ভিড়ে আমরা গুণী সাহিত্য সমালোচক পাই হাতেগোনা দুএকজন—বুদ্ধদেব বসু অথবা সৈয়দ আলী আহসান। অবশ্যই আরও কিছু উজ্জ্বল নাম উচ্চারণ করা যায় কিন্তু বিভাজিত বাঙালি পাঠককে গালি উস্কে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না জেনেই বিরত থাকতে হলো।

বর্ণিত প্রেক্ষাপট মনে রেখেই আমি বিভিন্ন জনের প্রবন্ধ নিবন্ধ কলাম পড়ি। সবক্ষেত্রে যে হতাশ হতে হয়, এমনও নয়। এসময়ে যে দুচারজনের প্রবন্ধ নিবন্ধ উপ-সম্পাদকীয় গদ্য পড়ে মোটামুটি ভালো লাগে, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আবু আফজাল সালেহ। তিনি কবিতা লেখেন, দৈনিকের পাতায় উপ-সম্পাদকীয় লেখেন এবং একইসঙ্গে সাহিত্য সমালোচনামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখেন। তার লেখালেখির সংখ্যা বা পরিমাণ বলা যায় বেশি। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তার লেখা চোখে পড়ে। জাতীয় দৈনিকের পাশাপাশি লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্যপত্রিকা, ওয়েবজিন প্রভৃতিতেও লিখে চলেছেন সুপ্রচুরতায়।

আবু আফজাল সালেহ একজন বহুমাত্রিক লেখক। তিনি কবিতা লেখেন। তার কবিতা বিষয়প্রধান। নর-নারীর প্রেম ও সামাজিক প্রপঞ্চসমূহ কবিতার বিষয়। তার কবিতা নিয়ে আজ কথা বলতে চাই না। আবার তার প্রবন্ধ নিয়ে চূড়ান্ত কথা বলার সময়ও এখনো হয়নি। কারণ এখন তার লেখালেখির ভরা মৌসুম চলছে। আজ অবধি যা লিখেছেন, হয়তো সেসবকে অতিক্রম করে যাবেন সামনের দিনগুলোয়। তেমনি লক্ষণ চোখে পড়ছে। আজ যা বলবো তা হবে অন্তর্বর্তীকালীন অভিমত। কয়েক বছর যাবত আবু আফজাল সালেহের বিভিন্ন প্রবন্ধ আমার নজরে পড়েছে এবং আমি সেসবের অধিকাংশ মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছি।

আমার পড়া তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলো হচ্ছে: ‘কবি ও কবিতার শ্রেষ্ঠত্ব’, ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত: অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রয়োগে আধুনিক যুগের সূচনা’, ‘রবীন্দ্রনাথের গদ্য এবং গদ্যকবিতা’, ‘রবীন্দ্র চিত্রকলার নানা দিক’, ‘বর্ষা ও রবীন্দ্রনাথ’, ‘কবি হুইটম্যানের কবিতায় ব্যক্তিগণতন্ত্র’, ‘নজরুল ও শেলীর কবিতা: বিপ্লবী এবং মানবিক সত্তা’, ‘নজরুল: জনকবি, মানবতাবাদী কবি’, ‘নজরুল ও বায়রন মুক্তিপ্রত্যাশী এবং বিপ্লবী কবি’, ‘নজরুলের কবি-মানস’, ‘কিটস, ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও জীবনানন্দ দাশের কবিতা’, ‘জীবনানন্দ দাশের কবিতায় মনস্তত্ত্ব’, ‘জীবনানন্দের কবিতায় হেমন্ত ও রূপসী বাংলা’, ‘পরাবাস্তব ভাবনা: জীবনানন্দ এবং মান্নান সৈয়দ’, ‘অমিয় চক্রবর্তী: কবিতায় নতুন ছবি আঁকিয়ে’, ‘পাবলো নেরুদা: কূটনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ ছাপিয়ে একজন কবি’, ‘বুদ্ধদেব বসু: কবিতার শিক্ষক’, ‘জসীম উদদীনের আবহমান গ্রামীণ সংস্কৃতির কবিতা’, ‘প্রকৃতি বন্দনায় বন্দে আলী মিয়া’, ‘বন্দি শিবির থেকে কাব্যগ্রন্থ: শামসুর রাহমানের যুদ্ধদিনের কড়চা’, ‘শামসুর রাহমানের শহর’, ‘কবিতা কী?’, ‘আল মাহমুদের কবিতা-দর্শন’, ‘কবিতায় আল মাহমুদ কেন আলাদা’, ‘সোনালি কাবিন সনেটগুচ্ছ: বাংলা কবিতায় একটি অনিন্দ্য শিল্প’, ‘আল মাহমুদের গ্রাম’, ‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা: রক্তজবার মতো ঝরঝরে ও উজ্জ্বল’, ‘লালসালু উপন্যাসে অস্তিত্ববাদ এবং মজিদ চরিত্রের সুলুক সন্ধান’, ‘হাসান আজিজুল হক: কাঁটাতার পেরিয়ে’, ‘দলিত ও গণমানুষের কণ্ঠস্বর’ (মহাশ্বেতা দেবীকে নিয়ে), ‘আবুল হাসানের কবিতা: নান্দনিক ভাষায় বিদ্রোহী উচ্চারণ’, ‘কবি হুমায়ুন আজাদ’, ‘আব্দুলরাজাক গুরনাহ: কেন্দ্র ছাড়া একটি বিশ্ব’, ‘স্টালিনের শক্তি’, ‘আমিনুল ইসলামের কবিতার ভাষা’, ‘আমিনুল ইসলামের কবিতা: বৈচিত্র্যময় চিত্রকল্প’, ‘সালাহ উদ্দিন মাহমুদের গল্প: সমাজবাস্তবতার ছবি’, ‘সালাহ উদ্দিন মাহমুদের কবিতা: প্রেম ও প্রকৃতির বয়ান’, ‘একুশ ঘিরে কবিতা সাহিত্য’, ‘একুশের শপথে এগিয়ে যেতে হবে’, ‘পয়লা-বৈশাখ’, ‘বাঙালির কার্নিভাল’, ‘বাঙালির রাজনৈতিক ভাবনা’ প্রভৃতি।

আবু আফজাল সালেহ তার প্রবন্ধগুলোয় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়টি হচ্ছে, তিনি কোনো লেখকের প্রতি অন্ধভক্তি কিংবা বিদ্বেষ ভাব মনে নিয়ে লেখেন না। বিভাজিত ও বিভেদিত হাওয়ায় বসবাস করেও তিনি মুক্তমনের অধিকার লাভ করেছেন এবং ধরে রেখেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছেন; নজরুলকে নিয়ে লিখেছেন: কিন্তু তাঁদের দুজনের কাউকেই ছোটো প্রমাণ করার পক্ষপাতদুষ্টতা প্রদর্শন করেননি। তিনি শামসুর রাহমানকে নিয়ে লিখেছেন আবার আল মাহমুদকে নিয়েও লিখেছেন; কিন্তু দুজনের কারো প্রতিই অন্ধভক্তি অথবা বিদ্বেষ পোষণ করেননি। তিনি জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করেছেন আবার জসীম উদদীনের কবিতা নিয়ে লিখেছেন প্রবন্ধ-নিবন্ধ। কিন্তু তাঁদের কারও প্রতিই অযৌক্তিক ভক্তি বা বিরূপতা দেখাননি।

আবু আবজাল সালেহর আরেকটিগুণ হলো—তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত কবি-কথাসাহিত্যিক-গবেষকদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত নবীন বা কম প্রতিষ্ঠিত কবি-কথাসাহিত্যিক-গবেষকদের কবিতা-উপন্যাস-ছোটোগল্প-প্রবন্ধ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এক শ্রেণির পণ্ডিত-বুদ্ধিজীবী আছেন; যারা নতুনদের কাজকে উন্নাসিক অবজ্ঞার চোখে দেখে শান্তি পান। তারা ‘আজকাল কিছুই হচ্ছে না’, ‘এরা কেউ কবি নয়’ এমন ধরনের নেতিবাচক বুলি আওড়ে যান কিন্তু নতুনদের কাজকে নিবিড়ভাবে ও গভীরভাবে পাঠের কষ্টটুকু করতে চান না। এটাও একটা বুদ্ধিজীবী রোগ। সালেহ হয়তোবা পণ্ডিত বা বুদ্ধিজীবী নন বলেই প্রতিষ্ঠিতদের পাশাপাশি নবীন বা অপ্রতিষ্ঠিতদের সাহিত্যকর্মও সমান গুরুত্ব ও মনোযোগ দিয়ে পাঠ করেন। এভাবে তিনি নবীন-প্রবীণ-মৃত্যুবরণকারী বহু কবি-কথাসাহিত্যিক-গবেষক-প্রাবন্ধিকের কাজ নিয়ে সামলোচনামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন।

আবু আবজাল সালেহ সক্রিয় দেশপ্রেমিক। মানবপ্রেমিক। একইসঙ্গে শিল্প-সাহিত্যপ্রেমী। তিনি নিবিড়ভাবে সমাজসচেতন। তিনি প্রায়শ দৈনিকের উপ-সম্পাদকীয় পাতায় নানা বিষয়ে নিজস্ব মূল্যায়ন ও অভিমত সম্বলিত নিবন্ধ বা ফিচার লিখে থাকেন। অন্যদিকে শিল্প-সাহিত্যের ব্যাকরণগত দিকটি নিয়েও তার পড়াশোনা প্রচুর। এই দ্বিবিধ যোগ্যতায় তিনি সাহিত্যকর্মের সামাজিক উপযোগিতা এবং শৈল্পিক উৎকর্ষ উভয় দিকই মূল্যায়ন করতে পারেন এবং করে থাকেন। তার আরেকটি বড় যোগ্যতা আছে: তুলনামূলক সাহিত্য পঠনপাঠন ও সে বিষয়ে সাধ্যমতো জ্ঞানার্জন। তিনি মূলত বাঙালি লেখকদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে মূল্যায়নধর্মী কাজ করে থাকেন। কোনো লেখকের কাজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বাংলাভাষি এবং ভিনভাষি লেখকদের সদৃশ সৃষ্টিকর্ম তুলনায় আনেন প্রয়োজন মাফিক। এতে সংশ্লিষ্ট লেখকের সাহিত্যগত অবস্থানটি অনেকখানি অথবা কিছুটা নির্ণীত হয়ে যায়। একইসঙ্গে এ কথাও গুরুত্বপূর্ণ যে, সালেহ পায়শ ক্ষেত্রেই মূল্যায়নধর্মী একটা নিজস্ব অভিমত প্রদান করে থাকেন। সেসব অভিমতের কোনোটা বা কোনো কোনোটা অন্য কারো অভিমতের সঙ্গে মিলে যেতেও পারে, তবে সেটা কাকতালীয় ব্যাপার অথবা মানসিক ঐক্যজনিত ঘটনা। তাতে তার নিজস্বতা ক্ষুণ্ণ হয় না এতটুকু।

আবু আফজাল সালেহ মননশীল লেখক হিসেবে কোনো দুর্বলতা ধারণ করেন কি না সে প্রশ্নের একটা সহজ উত্তর তো এই যে, মানুষ মাত্রই এক বা একাধিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে জীবন ধারণ করে, কাজ করে যায়। সালেহের ক্ষেত্রেও কথাটি সমানভাবে প্রযোজ্য। আমার চোখে তার মননশীলতার একটি বিষয় ধরা পড়েছে। তিনি অনেক সময় বেশি বেশি লেখার এবং বেশি সংখ্যক লেখকের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে লেখার তাড়না ও তাড়া অনুভব করেন। তার যেন প্রতি সপ্তাহেই একাধিক সাহিত্যপাতায় লিখতেই হবে, থাকতেই হবে! সন্দেহ নেই যে, বেশি বেশি লিখতে পারাটাও একটা অনন্য শক্তির ব্যাপার। কিন্তু বেশি ও তাড়াহুড়ার একটা সম্পর্ক আছে। এ-দুটোর সাথে গুণগত মান ধরে রাখতে পারা না পারার একটা সংশয় জড়িয়ে থাকে। আবু আফজাল সালেহ ইতোমধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠার বা নিজেকে জানান দেওয়ার কাজটি সাফল্যের সঙ্গেই সম্পন্ন করেছেন। এখন থেকে তার আরেকটু সিলেক্টিভ হতে বাধা নেই।

আবু আফজাল সালেহের সমালোচনাজনিত মূল্যায়ন অথবা অভিমত কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা বহন করে অথবা সাহিত্যগত মূল্য কতখানি, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। সব ক্ষেত্রেই যে তার মূল্যায়ন ও অভিমত শতভাগ যথার্থ কিংবা অকাট্য হয়েছে বা হবে এমন দাবি করার সুযোগ নেই, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হচ্ছে এই, তিনি পক্ষপাতমুক্ত মন নিয়ে নিজের কথাগুলো বলেন। কোথাও তার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করা যায়, কোথাও-বা তার অভিমতকে নাকচও করা যায় কিন্তু তিনি বিশেষ কোনো লেখকের সৃষ্টিকর্মের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক পক্ষপাতের আশ্রয় নিয়েছেন, এমনতর অভিযোগ করা চলে না। বস্তুনিষ্ঠ মন হচ্ছে গবেষক-প্রাবন্ধিক-আলোচক আবু আফজাল সালেহের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই বস্তুনিষ্ঠতার গুণটির ওপর সওয়ার হয়েই তার মননশীল রচনা গ্রহণযোগ্যতার পথ ধরে বহুদূর যেতে পারে। আমি সামনে দশ বছর পর আবু আফজাল সালেহের মননশীল সৃষ্টিকর্ম নিয়ে চূড়ান্ত লেখাটি লিখতে চাই। ততদিন পর্যন্ত শুভ কামনাসহ তার রচনাসমূহ পড়ে যাওয়ার আয়ু পেতে চাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে।

সুত্র জাগো