অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও ভোলার নদীতে কাঙ্খিত ইলিশ পাচ্ছেনা জেলোরা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২০ রাত ১০:৪৭

remove_red_eye

৭৯৬




দাম চড়া,  লোকসানের মুখে আড়ৎদারগন

হাসিব রহমান:  সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও ইলিশের জন্য খ্যাত ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেরা কাঙ্খিত ইলিশ পাচ্ছে না।  ভরা মৌসুমে নদীতে  প্রচুর পরিমান ইলিশ পড়ার কথা থাকলেও  তা না পাওয়ায় জেলে ও আড়ৎদাররা হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। যে পরিমান মাছ ধরা পড়ছে তা দিয়ে জেলেদের ধার দেন পরিশোধ তো দূরের কথা তাদের সংসার চালাতে গিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে। মৎস্যঘাট গুলোতে ইলিশের সংকট থাকায় আড়ৎদারগন চড়া মূল্য দিয়ে মাছ ক্রয় করতে হয়। কিন্তু  ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় মোকামে সাগরের মাছের ব্যাপক সরবরাহ থাকায় সেখানে ইলিশের দাম কম । আর তাই  ভোলার মাছের আড়ৎদারগনকে বড় মোকামে মাছ বিক্রি করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়ে।
ভোলার ইলিশা মৎস্যঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গুটি কয়েক আড়ৎদারের তহবিলে সামনে কয়েকজন জেলে ও পাইকারি ক্রেতাদের ভীড়। জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে ঝুড়িতে করে আড়ৎদারদের গদিতে নিয়ে আসছে। কিন্তু মাছের পরিমান খুবই কম। কিছু কিছু ঝুড়ির ইলিশ মাছ সাইজে এক কেজি থেকে সোয়া কেজি ওজনের। মাছের ডাক ওঠে এক হালি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ১ শত টাকা। জেলেরা জানায় গত বছর এই সময় মৎস্যঘাটে জমজমাট বেঁচা কেনা হয়। কিন্তু এবছর ভারা মৌসুমে সেই চিত্র আর নেই। মাছ বিক্রি করতে আসা জেলে ইউসুবের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, গত ২ দিন আগে তারা ৭ জন জেলে ও মাঝি মাল্লাসহ মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যায়। তারা ২ দিনে যে মাছ পেয়েছে তা বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ২২ হাজার টাকা।  অথচ তাদের ট্রলারের তেল ও খাওয়া দাওয়াসহ প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ট্রলারের ভাগ,জালের ভাগসহ মাহাজনকে দিয়ে তাদের ভাগে জনপ্রতি ৪/৫ শত টাকার বেশী থাকবে না। অথচ গত বছর এই সময়ে ইউসুব দৈনিক নদীতে মাছ ধরে বিক্রি শেষে ২/৩ হাজার টাকা  একাই পেতো।  তার মতো  মিলন মাঝি সহ একাধিক জেলেরই প্রায় একই অবস্থা। নদীতে  ইলিশ মাছ না পেয়ে তারা চরম হতাশায় রয়েছে। জেলেরা বলছে,তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে ভরা মৌসুমে তারা নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরবে। এই সময় মাছ পেয়ে তাদের সারা বছরে ধার দেনা পরিশোধ করে কেউ ঘর তুলবে। আবার কেউ বা একা ছোট নৌকা আর জাল কিনে নদীতে যাবে। টানাটানির সংসারের পরিবারের প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফুটাবে। মনে মনে এমন স্বপ্ন বুনলেও নদীতে জাল পেতে ভরপুর ইলিশ না পাওয়ায় চরম সংকট আর অভাব অনটনের মধ্যে তাদের দিন কাটছে । জেলেরা বলছে, নদীতে অসংখ্য ডুবো চর রয়েছে। তার উপর প্রভাবশালীদের অবৈধ খুটা জাল,মশারি জাল,বিন্দি জাল পেতা রাখা হয়। এসব কারনে ইলিশের বিচরন বা আসার পথ বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। তাই ভরা মৌসুমে সাগর মোহনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। যে কারনে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর জেলো তাদের জালে চাহিদা মতো ইলিশা পাচ্ছে না।
ইলিশামৎস্য ঘাটের আড়ৎদার ইমন জানান, তাদের এইঘাটে গত বছর এই সময় প্রতিদিন ৪ শত থেকে সাড়ে ৪ শত মন ইলিশ মাছ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। কিন্তু এবছর এখন প্রতিদিন ৮০/৯০ মন ইলিশ তারা ক্রয় করে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় মোকামে পাঠাচ্ছে। আড়ৎদার সাহাবুদ্দিন জানান, ভোলার নদীতে জেলেরা চাহিদা মতো ইলিশ না পাওয়াম ভরা মৌসুমে ভোলায় তারা বেশী দামে মাছ ক্রয় করে। কিন্তু সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় ঢাকা,চট্রোগ্রামসহ বড় বড় মাছে আড়তে ইলিশের দাম কমে গেছে। তাই ভোলায় তার বেশী দামে মাছ কিনে মোকামে কম দাম হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন,ভোলায ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় কিনতে হয়। কিন্তু মোকামে বিক্রি করতে গেলে ৩ হাজার ৫ শত থেকে ৭ শত টাকা বিক্রি করতে হয়। মনপুরার কলাতলির মৎস্যঘাটের আড়দার নাহিদ জানান, তাদের এলাকার মেঘনা নদীতে ইলিশ কম ধরা পড়ায় তাদের আড়তে ইলিশ কম । তাই দাম বেশী। এ ব্যাপারে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, ইলিশের প্রধান মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। সমুদ্রে ব্যাপক ভাবে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। অচিরেই মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ আসবে এবং জেলেদের জালে ধরা পড়বে।  তবে এখন মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ কম পাওয়ার কারন কি তার কোন সুস্পষ্ট উত্তর দেননি। তবে তিনি বলেন,গত বছর ভোলায় ইলিশ আহরনে লক্ষমাত্রা ছিলো ১ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষমাত্রার বেশী ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরন হয়। তিনি আশা করছেন এবছরও তাদের লক্ষমাত্রা ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টন ইলিশ আহরন হবে।