অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ১৪ই নভেম্বর ২০২৫ | ৩০শে কার্তিক ১৪৩২


ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয় : প্রধান বিচারপতি


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫শে অক্টোবর ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬:২৪

remove_red_eye

৮৫

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন-বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি  ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয় বরং এটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।

জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, মানবতা যখন অবিচার ও অমানবিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভয়াবহ পরিণতি প্রত্যক্ষ করে, তখনই মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা মানবজাতিকে নতুন এক নৈতিক চেতনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, যখন রাষ্ট্র নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাদের কণ্ঠরোধ করে, তখন ন্যায়ের জন্য লড়াই করা নৈতিকভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস উল্লেখ করে বলেন, আমাদের ইতিহাসও সেই সত্যের সাক্ষ্য বহন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্য ছিল না-এটি ছিল ন্যায়, মর্যাদা ও অস্তিত্বের অধিকারের সংগ্রাম। ঠিক একইভাবে ১৯৭১ সালে বাঙালি কেবল একটি পতাকা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য নয়; বরং মর্যাদা, সমতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রামে নিয়োজিত হয়েছিলো।

প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ, বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ন্যায়বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন- জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাস্তবতার আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রশাসনিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নৈতিকভাবে সাহসী ও সংবিধানিকভাবে শক্তিশালী বিচার বিভাগ বিনির্মাণ করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন- তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের একটি ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেন, যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। এই সচিবালয় বিচার প্রশাসনের কেন্দ্রীয় কাঠামো হিসেবে কাজ করবে, যেখানে ন্যায়বিচার ও বিচার ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের অভিগম্যতা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হবে।

দু’দিন পূর্বে ২৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর নীতিগত অনুমোদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ বিগত ১৫ মাসের সুপরিকল্পিত কৌশলগত প্রচেষ্টা ও বহুপাক্ষিক প্রয়াসের ফল।

প্রধান বিচারপতি বলেন, এই ১৫ মাসে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী শাখার মধ্যে কৌশলগত বোঝাপড়া ও সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন,  এখন  আমাদের প্রয়োজন পারস্পরিক সহযোগিতা, আস্থা ও দূরদর্শিতা-যাতে বিচার বিভাগের কাঠামোগত স্বাধীনতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তিনি এই কাঠামোগত পরিবর্তনের টেকসই রূপায়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি জেলা আদালতে পেশা পরিচালনাকারী আইনজীবী সমাজ, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন, জেলা আদালতের বিচারকবৃন্দ, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনসহ সব অংশীজনের প্রতি এই কাঠামোগত রূপান্তরকে টেকসই করতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

প্রধান বিচারপতি বলেন, সব অংশীজনকে একটি মৌলিক সত্য উপলব্ধি করতে হবে যে তারা সবাই একটি পারস্পরিক দায়বদ্ধতার সম্পর্কে দায়বদ্ধ। তাই সবার পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে সহযোগিতা, যুক্তিবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীলতা। তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যে, কোনো ধরনের অবিশ্বাস বা একতরফা আচরণ গত ১৫ মাসের নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার এই ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে।  তাই তিনি বিচার বিভাগীয় স্বায়ত্তশাসনের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমন্বয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও নবীন আইনস্নাতকদের উদ্যেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন- আইনের অধ্যয়ন কেবল পেশাগত প্রশিক্ষণ নয় বরং এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাধনা। প্রত্যেক আইনজীবী ও বিচারককে মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেক আইনের পেছনে আছে একটি জীবন, প্রত্যেক রায়ের পেছনে আছে একটি ভাগ্য। তিনি বলেন, ন্যায়ের প্রকৃত মান নিরপেক্ষ ও মানবিক বিচারের মধ্যে নিহিত।

প্রযুক্তি-নির্ভর ন্যায়বিচার ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা এখনো ঔপনিবেশিক কাঠামোর উত্তরাধিকার বহন করছি। তাই ডেটা-নির্ভর ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল সংযোগ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বয়ংক্রিয়তার যুগে আমাদের বিচারব্যবস্থাও সময়োপযোগী হতে হবে।

দেশের আইনাঙ্গনের সমৃদ্ধিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য প্রাজ্ঞ আইনবিদ তৈরি করেছে। আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকে ভবিষ্যতেও এমন আইনজ্ঞ তৈরি হবে, যারা কেবল জ্ঞানে নয়, মানবিকতাতেও আলোকিত হবে।

তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের পুনর্জাগরণ এখন আমাদের সময়ের আহ্বান। সংবিধানের যে স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার রয়েছে, তা যেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়—সেটিই আমাদের দায়িত্ব। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ-নিজ অবস্থান হতে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এস,এম, এমদাদুল হক ও বিচারপতি এ,কে,এম, আসাদুজ্জামান বিশেষ অতিথি ছিলেন। 

এছাড়া, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বেশকজন বিচারপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষকবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও নবীন আইনস্নাতকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 





মানবিকতার আলোকবর্তিকা : ভোলার প্রিয় জেলা প্রশাসক আজাদ জাহানের বিদায়বেলা

মানবিকতার আলোকবর্তিকা : ভোলার প্রিয় জেলা প্রশাসক আজাদ জাহানের বিদায়বেলা

ভোলার মানবিক ডিসি মো. আজাদ জাহান অন্যত্র যোগদান, রেখে গেলেন সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

ভোলার মানবিক ডিসি মো. আজাদ জাহান অন্যত্র যোগদান, রেখে গেলেন সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

মনপুরায় যুবদল-ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ

মনপুরায় যুবদল-ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ

জুলাই সনদ ও গণভোটের আগে নির্বাচন নয় : মনপুরায় প্রফেসর কামাল উদ্দিন

জুলাই সনদ ও গণভোটের আগে নির্বাচন নয় : মনপুরায় প্রফেসর কামাল উদ্দিন

মনপুরায় ধানক্ষেত থেকে হরিণ শাবক উদ্ধার

মনপুরায় ধানক্ষেত থেকে হরিণ শাবক উদ্ধার

বরিশালে রেইজ প্রকল্পের দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন নানা পন্য নিয়ে উদ্যোক্তাদের মেলা

বরিশালে রেইজ প্রকল্পের দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন নানা পন্য নিয়ে উদ্যোক্তাদের মেলা

ফেব্রুয়ারিতে উৎসবমুখর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারিতে উৎসবমুখর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতির উদ্দেশে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতির উদ্দেশে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে : প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে : প্রধান উপদেষ্টা

আরও...