অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বুধবার, ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ই পৌষ ১৪৩২


হত্যার সময় বর্ষার ভাষ্য, ‘তুমি না সরলে আমি মাহিরের হতে পারবো না’


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১শে অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৫:০৬

remove_red_eye

৯০

রাজধানীর পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন (২৫) হত্যাকাণ্ডের পেছনে উঠে এসেছে ত্রিভুজ প্রেমের দ্বন্দ্বের গল্প। হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জোবায়েদের ছাত্রী ও ‘প্রেমিকা’ বার্জিস শাবনাম বর্ষা।

সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন বর্ষার প্রথম প্রেমিক মাহির রহমান।

 

পুলিশ বলছে, ঘাতক মাহিরের ছুরিকাঘাতে আহত জোবায়েদ শেষ মুহূর্তে সিঁড়িঘরে দাঁড়িয়ে থাকা বর্ষার কাছে তাকে রক্ষার আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু বর্ষা তখন রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করা জোবায়েদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি না সরলে আমি মাহিরের হতে পারবো না। ’ কিছু সময় পরই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এসএন নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ পুরান ঢাকার বংশাল থানার নূরবক্স লেনের একটি বাসায় ছাত্রীকে পড়াতে গিয়ে হত্যার শিকার হন। নিহত জোবায়েদ বর্ষাকে পড়াতে গিয়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। একই সময়ে বর্ষা মাহিরের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল। এই ত্রিভুজ প্রেমের জট খুলতে বর্ষা নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজায়।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ছাত্রী বর্ষার প্রথম প্রেমিক মো. মাহির এবং তার বন্ধু ফারদীন আহমেদ আয়লানকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বর্ষা একই সঙ্গে জোবায়েদ ও মাহির—দুজনের সঙ্গেই সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল। গত ২৬ সেপ্টেম্বর মাহির বিষয়টি জানতে পেরে বর্ষাকে চাপ প্রয়োগ করলে, সেদিনই সে জোবায়েদকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে মাহির ও আয়লান মিলে ছুরি কিনে নেয়। ১৯ অক্টোবর বিকেলে বর্ষার বাসায় তারা অবস্থান নেয়। বর্ষা নিজেই তার শিক্ষক ও প্রেমিক জোবায়েদকে ডেকে আনে। তিনি আসার পর তাকে বলা হয় বর্ষার জীবন থেকে সরে যেতে। তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে মাহির ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে জোবায়েদের গলায় আঘাত করে হত্যা করে।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা তদন্তে পেয়েছি, মাহির একই বাসায় ভাড়া থাকত। বর্ষার সঙ্গে তার পরিচয় অনেক দিনের। প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রায় দেড় বছর ধরে। অন্যদিকে, জোবায়েদ এক বছর ধরে বর্ষাকে পড়াতেন। বর্ষা জোবায়েদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। মেয়েটার মানসিক অবস্থা ছিল এমন যে, যখন যার কাছে যেত, তাকেই ভালোবাসার কথা বলত। এক পর্যায়ে সে মাহিরকে বলে— ‘জোবায়েদকে না সরাতে পারলে আমি তোমার হতে পারবো না। ’ এরপরই তারা হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। মাহিরের এক আঘাতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জোবায়েদের মৃত্যু হয়।

মাহিরকে তার মা থানায় হস্তান্তরের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, আসলে আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের নানা ধরনের কৌশল থাকে। আমরা তার পরিবারের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে তাকে থানায় আনতে সক্ষম হই। স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ নয়, এটি ছিল পুলিশের পরিকল্পিত কৌশলের অংশ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো হত্যার পরিকল্পনাটি ছিল বর্ষার। বরগুনার মিন্নির ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার অনেক মিল রয়েছে। মেয়েটি কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সাহস দেখাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত সে নিজেই হত্যার পরিকল্পনা করে।

হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক কোনো বিষয় আছে কি না জানতে চাইলে এস.এন. নজরুল বলেন, এখানে কোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নেই। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই তারা হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। এটি নিছক ত্রিভুজ প্রেমেরই ঘটনা।

হত্যার সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, বর্ষা আমাদের নিশ্চিত করেছে, জোবায়েদ মারা যাওয়ার সময় সে উপস্থিত ছিল। তদন্তে আমরা পেয়েছি, মৃত্যুর আগে জোবায়েদের শেষ কথা ছিল— ‘আমাকে বাঁচাও’। উত্তরে বর্ষা বলে, ‘তুমি না সরলে আমি মাহিরের হবো না। ’

তিনি আরও জানান, দোতলার সিঁড়িতে জোবায়েদকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সে বাঁচার চেষ্টা করে দোতলার কলিংবেল বাজায় এবং দরজায় ধাক্কা দেয়। সেখান থেকে রক্ত নিচে গড়িয়ে পড়ে। বর্ষাদের বাসা পাঁচতলা হলেও ঘটনাস্থলে সে তখন তিনতলার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছিল।

প্রসঙ্গত, নিহত জোবায়েদ হোসাইন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। সোমবার (২০ অক্টোবর) তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।