অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শনিবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৫ | ৬ই বৈশাখ ১৪৩২


ভোলায় টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে কাঁদা পানি কৃষকরা শঙ্কায়


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ই এপ্রিল ২০২৫ রাত ০৮:০৬

remove_red_eye

৪৩

নেয়ামত উল্যাহ : ভোলায় দুই দিনের বৃষ্টিতে জনজীবন থমকে গেছে। রাস্তাঘাটে কাঁদাজল জমে গেছে। কৃষকরা আছেন শঙ্কায়। খেত ভরা তাঁদের ফসল। তবে কৃষি বিভাগ বলছে শঙ্কার কিছু নেই। আউশ আবাদের জন্য আরও বৃষ্টি চাই।  
সরেজমিন দেখা যায়- পহেলা বৈশাখ থেকে প্রতিদিন ভোলায় থেকে থেকে বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া বইছে। আবহাওয়া অফিস জানায়-বুধবারে ৫দশমিক ৮ মিলিমিটার , বৃহষ্পতিবার ৩দশশিক মিলিমিটার এবং শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২ দশমিক ২মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকাল সাড়ে ৪টায়) বৃষ্টি হচ্ছিল।
সরেজমিন দেখা যায়, তিন দিনের বৃষ্টিতে ভোলার রাস্তাঘাটে পানি-কাঁদা জমে গেছে। বিশেষ করে লঞ্চঘাটগুলোতে যাত্রী ওঠা-নামায় সমস্যা হয়েছে। নদীতে বেড়েছে ঢেউ।  
ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের পরিবহন কর্মী মো. হোসেন ভোলা থেকে লঞ্চযোগে যাত্রী নিয়ে লক্ষ্মীপুর বাসে উঠিয়ে দেন। সে বাস বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। তিনি জানান, দুপুরের দিকে প্রচন্ড মেঘ করায় আকাশ কালো হয়ে যায়। তখন দমকা হাওয়ায় লঞ্চ রুলিং করছিল।  
ভোলা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চের একাধিক যাত্রী জানায়- দমকা হাওয়া বইয়ে যাওয়ার কারণে ঢাকা-ভোলা, ভোলা-বরিশাল  ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের যাত্রীবাহি লঞ্চগুলোতে ব্যাপক রুলিং হয়েছে।

সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক আমির হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টিতে মাটির রাস্তায় পানি-কাঁদা জমে গেছে। মানুষ জনের দুর্ভোগ বেড়েছে। কাজে যেতে পারছে না। বৃষ্টিতে শীত শীত অনুভব হচ্ছে। রাতের বেলা কাঁথা গায়ে দিতে হচ্ছে। এলাকায় বৃদ্ধ ও শিশুদের সর্দিকাশি বেড়েছে।
দৌলতখান মদনপুরের ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন শিকদার বলেন, বৃষ্টির কারণে মদনপুরের কৃষকদের মধ্যে ফসল তোলার ধুম পড়ে যায়। রাস্তাঘাট কাঁদা হয়ে গেছে। মানুষ গরু-বাছুর , ছাগল-মহিষ ঘাস খাওয়াতে নামাতে পারেনি।
 
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার বাড়ি সূত্র জানায়, ভোলার খেতে এখন ১৫হাজার ৯০৮হেক্টর সয়াবিন, ২৮হাজার ৬৫৫হেক্টর মুগ, ১৪হাজার ৫৮৬ হেক্টর মরিচ, ৯হাজার ৬৯২হেক্টর চিনাবাদাম, ৬১৮হেক্টর ফেলন ডাল, ২হাজার ১২৭হেক্টর মিষ্টি আলু, ৫হাজার ৫৫৬হেক্টর গ্রীষ্মকালিণ শাক-সবজি, ৬২ হাজার ৬৫৭হেক্টর আধাপাকা, পাকা বোরো ধানসহ প্রায় দেড় লাখ হেক্টর খেতে বিভিন্ন রকম রবি ও গ্রীষ্মকালিন ফসল রয়েছে।

কৃষকরা জানান, এ রকম টানা বৃষ্টি হলে কৃষক ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবে।
ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কৃষক রুহুল আমিন মিজি (৭৪)বলেন, তাঁর প্রায় ৮০শতাংশ জমিতে মরিচ, শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল রয়েছে। যে বৃষ্টি হয়েছে তা ফসলের জন্য উপকারী । কিন্তু টানা বৃষ্টি হলে খেতের ফসল মারা যাবার আশঙ্কা আছে। তাই আল্লার কাছে প্রার্থনা করছেন, যেনো বৃষ্টি উপকারের মধ্যে থাকে।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের কৃষক শাহাবুদ্দিন ফরাজি(৫৭) বলেন, ' খেতে ৩২একর জমিতে সয়াবিন আবাদ করেছেন। টানা বৃষ্টির কারণে আধাপাকা সয়াবিন কাটতে হচ্ছে। খেতে পানি জমলে বা জোয়ার পানি উঠলে সয়াবিন পঁচে যাবে।'
পশ্চিম ইলিশার কৃষক ফারুক দৌলত বলেন, সয়াবিন তুলে রেখেছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ভাঙতেও পারছি না, শুকাতেও পারছি না।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চরকালি গ্রামের মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ধান এখনও পুরোপুরি পাকেনি। টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে বৃষ্টি না কমলে এ অবস্থায় কাটতে হবে। আবার সঠিক সময়ে না শুকাতে পারলে ধান গজিয়ে যাবে।  
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এএফএম শাহাবুদ্দিন জানান, শীত মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর মাটি এমনিতে শুকিয়ে আছে। গত তিনদিনের  বৃষ্টিতে রবি ও গ্রীষ্মকালিণ ফসলের তেমন ক্ষতি করবে না। বরং আউশ আবাদ বাড়ানোর জন্য আরও বৃষ্টি দরকার।