অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


লালমোহনে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৮

remove_red_eye

৫২

লালমোহন প্রতিনিধি : আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে নানান রোগে আক্রান্ত হন বিভিন্ন বয়সের মানুষজন। তবে চলতি বছরে আবহাওয়ার সর্বোচ্চ বিরূপ প্রভাব পড়েছে শিশুদের ওপর। বর্তমানে কেবল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে অন্তত ২৫জন শিশু। যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ১০দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছে আড়াইশরও অধিক শিশু। যার মধ্যে ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী শিশু সবচেয়ে বেশি। প্রায় এক মাস আগ থেকে  আশঙ্কাজনকভাবে এই উপজেলায় বেড়েছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। শয্যা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদের। শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতে থেকেই শিশুদের সুস্থতার জন্য দুর্ভোগ নিয়ে দিন পার করছেন আক্রান্ত শিশুদের স্বজনরা।
লালমোহন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নয়ানীগ্রাম থেকে ৩ মাসের শিশু মো. আব্দুল্যাহকে নিয়ে গত দুইদিন ধরে ভর্তি স্বজনরা। তার বাবা মো. নসু মিয়া জানান, প্রথম আমার ছেলের জ্বর-ঠান্ডা দেখা দেয়। কয়েকদিনেও তা না কমায় পরে তাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসি। এরপর পরীক্ষায় আমার ছেলে আব্দুল্যাহর নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসক তাকে ভর্তি করতে বলেন। চিকিৎসকের পরমার্শে আমরা ছেলেকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। তবে অনেক রোগী থাকায় বেড না পেয়ে এই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে মেঝেতে রয়েছি। এতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাড়ে ৩ মাসের বিবি আয়েশা নামের আরেক শিশুকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত চারদিন ধরে ভর্তি রয়েছেন স্বজনরা। ওই শিশুর বাবা মো. শাহিন বলেন, আমার মেয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। যার জন্য তাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছি। এখানে অনেক রোগীর চাপ। বেশিরভাগই শিশু। বেড না পেয়ে গত চারদিন ধরে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে মেঝেতে আছি। মেঝেতে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ফ্যান-বাতি কিছুই নেই। তবুও মেয়ের সুস্থতার জন্য কষ্ট হলেও মেঝেতে থেকেই দিন পার করছি। তাই আমাদের দাবি এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেন দ্রæত শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার দিপালী রাণী দে জানান, এখানে নির্ধারিত পদের চেয়েও নার্সের সংখ্যা কম। তবুও নিউমোনয়িায় আক্রান্ত শিশুদের সাধ্যের মধ্যে কর্তব্যরত নার্সরা নিয়মিত সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন। তবে নার্সের সংখ্যা বাড়ানো হলে এই সেবা আরো সুন্দরভাবে দেওয়া যেত।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. মহসীন খান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে শিশুরা ব্যাপকভাবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। যা গত অন্তত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আক্রান্ত শিশুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে আমাদের সকল চিকিৎসকরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। তবে রোগীর সংখ্যা অধিক হওয়ায় রীতিমতো চিকিৎসকদের চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে শিশুদের নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করতে শিশুদের স্বজনদের অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের ঠান্ডাজনিত কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রæত তাদের নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হবে। তাহলেই এই আক্রান্তের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে।
এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার, তবে এখানে প্রায় সময়ই ৮০ থেকে ১২০জনের মতো রোগী ভর্তি থাকেন। আবার মাঝে মাঝে এই সংখ্যা দেড়শতও ছাড়িয়ে যায়। যার জন্য সব সময়ই শয্যা সংকট লেগেই থাকে। এজন্য অনেক রোগীকে বাধ্য হয়ে মেঝেতে থেকেই সেবা নিতে হচ্ছে। এতে করে দুর্ভোগে থাকেন রোগী ও স্বজনরা। রোগীদের এই দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমরা ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শয্যা বাড়ানো প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  শয্যা বাড়ানোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।