লালমোহন প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৪ই মে ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
১১৫
“নদীতে কাক্সিক্ষত মাছ নেই”
লালমোহন প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহন উপজেলার জেলেপল্লীতে বছরজুড়ে লেগেই থাকে অভাব-অনটন। গত ১লা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ দুই মাস মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ওই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর নদীতে গিয়ে কাক্সিক্ষত মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। এছাড়া দাদানের ফাঁদেও আটকে আছেন জেলেরা। এই দাদন থেকে মুক্তি মেলে না মৃত্যুতেও। নদীতে গিয়ে কাক্সিক্ষত মাছ না পাওয়ায় দিনের পর দিন জেলেদের বাড়ছে দেনা। অন্যদিকে জেলেপল্লীর শিশু-কিশোররাও ঝরে পড়ছে পড়ালেখা থেকে। তারা জড়াচ্ছে বাপ-দাদার মাছ ধরা পেশায়।
লালমোহন উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৪ হাজার ৮০৬ জন। তবে এর প্রকৃত সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার। যারা কেবল মাছ ধরার ওপরই নির্ভরশীল। লালমোহন উপজেলার ছোট-বড় অন্তত ২৭টি মৎস্যঘাট থেকে জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে নামেন। উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাকে অভয়াশ্রম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উপজেলার বাতিরখাল মৎস্যঘাটের ৩৫ বছর বয়সী জেলে মো. নূরেআলম। তার পেশা মাছ শিকার। তার বয়সের অন্তত ২২ বছরই কাটিয়েছেন মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে। এই নদীই তার জীবিকার একমাত্র মাধ্যম। তিনি বলেন, সম্প্রতি শেষ হওয়া নিষেধাজ্ঞা শেষে ১০জন জেলেসহ মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে নামি। একদিন নদীতে মাছ ধরার জন্য ট্রলারের তৈল, চাল, ডাল এবং অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় দশ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সারা রাত মাছ শিকার করে সকালে ঘাটে ফিরে মাছ বিক্রি করেছি ৮ হাজার টাকার। সেখান থেকে কমিশন বাবদ আটশত টাকা কেটে রেখেছেন আড়তদার। আয় তো দূরের কথা, ওইদিন লোকসানই হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। এতে করে দিনের পর দিন দেনার পরিমাণ কেবল বাড়ছে। নদীতে তেমন মাছ না থাকায় এখন আর মাছ ধরতে যাই না। জেলে নূরেআলমের মতো এমন অনেক জেলেই লোকসানের ভয়ে নদীতে যাচ্ছেন না। যার ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাবে দিন কাটছে লালমোহন উপজেলার অধিকাংশ জেলের।
ওই মৎস্যঘাটের মো. কামাল মাঝি, মো. নয়ন মাঝি এবং হেলাল মাঝিসহ আরো বেশ কয়েকজন জেলে জানান, আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি; যখন নদীতে মাছ থাকে তখন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আর যখন মাছ থাকে না তখন নিষেধাজ্ঞাও থাকে না। এ কারণেই মূলত আমরা মাছ পাচ্ছি না, দেনায় জড়িয়ে থাকি বছরের পর বছর। তাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে অনুরোধ রইলো সামনের দিকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করে দেওয়ার।
ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের বাতিরখাল মৎস্যঘাটের জেলে আইয়ুবসহ আরো কয়েকজন জেলে বলেন, মহাজনরা আড়তদারদের কাছ থেকে দাদনের টাকা নিয়ে নৌকা বা ট্রলারে থাকা অন্যান্য জেলেদের মাঝে টাকা বিতরণ করেন। এরপর মহাজন নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় দাদনের টাকা নেওয়া ১০ থেকে ১৫জন জেলেকে সঙ্গে নেন। জেলেরা মাছ ধরা এবং বিক্রির ওপর টাকা পায়। দেখা যায় মহাজন নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে আড়তদারের থেকে যে টাকা নেন, মাছ না পেলে ওই টাকা দেনাই থেকে যায়। আবার নতুন করে মাছ ধরতে গেলে আড়তদারের কাছ থেকে আবারও দাদন নিয়ে যায়। এভাবে দাদনের টাকা বাড়তে বাড়তে এক সময় ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায়। জেলেরা যতদিন নদীতে মাছ ধরবে ততদিন আড়তদার দাদনের টাকা ফেরত চায় না। জেলেরা যখন মাছ ধরা ছেড়ে দেয় তখন বৈঠকের মাধ্যমে আড়তদারের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই টাকা ফেরত দিতে গিয়ে দেনাগ্রস্ত অনেক জেলেকে ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয়। যার কারণে ইচ্ছা থাকার পরও অনেকে জেলে পেশা ছাড়তে পারছেন না। এভাবেই অধিকাংশ জেলেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয় দাদনের বোঝা। মৃত্যুর পরও মেলে না মুক্তি। কারণ দাদন নিয়ে মারা গেলে তার ওয়ারিশরা দাদনের ওই টাকা ফেরত দিতে হয়।
অন্যদিকে জেলেপল্লীর শিশু-কিশোররাও ঝরে পড়ছে লেখাপড়া থেকে। পড়ালেখা ছেড়ে তারা জড়াচ্ছে বাপ-দাদার মাছ ধরা পেশায়। বাতিরখাল মৎস্যঘাটের এমনই এক শিশু ১৪ বছর বয়সী মো. আল-আমিন। বিদ্যালয়ের বারান্দায় তার পা পড়েছে ঠিকই। তবে তা দীর্ঘাস্থায়ী হয়নি। কোনো রকমে প্রাথমিকের গÐি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছিল ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। তখন থেকে মাঝে মধ্যে স্বজনদের সঙ্গে নদীতে যাওয়া শুরু হয় শিশু আল-আমিনের। একপর্যায়ে নদীতে মাছ শিকার করা তারও পেশা হয়ে যায়। মাছ শিকার পেশা হওয়ায় শিশু আল-আমিন ছেড়ে দিয়েছে পড়ালেখা। এখন তার রোজ যুদ্ধ দক্ষ জেলে হওয়ার।
ওই এলাকার রিপন নামে আরেক শিশু জানায়, স্বজনদের সঙ্গে প্রথমে শখ করে নদীতে যাওয়া শুরু করি। সেই শখই এখন পেশা। প্রথম প্রথম নদীর উত্তাল ঢেউ দেখে ভয় হতো। তবে এখন সেই ভয় কেটে গেছে। এখন স্থানীয় অন্যান্য জেলেদের সঙ্গে নিয়মিত মাছ শিকারে যাই। যেদিন মাছ শিকারে যাই সেদিন কখনো দুইশত, কখনো পাঁচশত টাকা পাই। আবার কখনো খালি হাতেই ফিরতে হয়। যখন নদীতে গিয়ে মাছ ধরে টাকা পাই, তখন ওই টাকা মায়ের হাতে তুলে দিই।
লালমোহন উপজেলা সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, বর্তমানে নদীর বিভিন্ন স্থানে পলিমাটি জমে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে নদীর গভীরতা কমে গেছে। এ কারণে নদীতে মাছ আসছে না। তবে প্রচুর বৃষ্টি হলে নদীর পানি বাড়বে, তখন নদীতে মাছও আসবে। এরপর জেলেরা নদীতে গিয়ে কাক্সিক্ষত মাছ পাবেন বলে আশা করছি। এছাড়াও ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সময় জেলেদের মাঝে বৈধ জাল বিতরণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বকনা বাছুর বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের আশা এর মাধ্যমে জেলেরা কিছুটা হলেও ঋণের বোঝা থেকে রক্ষা পাবেন।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জেলেদের জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি সরকারিভাবে জেলেদের জন্য আরো কোনো বরাদ্দ আসে আমরা তা জেলেদের যথা সময়ে পৌঁছে দেবো। এছাড়া জেলেপল্লীর যেসকল শিশুরা বিদ্যালয় বিমুখ বা ঝরে পড়ছে তাদেরকে শিক্ষার আওতায় আনতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমরা চাই প্রতিটি শিশুই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক।
মনপুরায় লোকসানের মুখে সরিষা চাষিরা
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অবসরে গেলেন ভোলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.টি.এম রেজাউল করিম
তজুমদ্দিনে পুলিশের ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত
বোরহানউদ্দিনে শিশু ইসরাক হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুক্তিযুদ্ধ
বাংলাদেশ থেকে আরো জনশক্তি নিয়োগ, ভিসা সহজ করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির
বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হতে পারে ২০ জানুয়ারি
সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
ভোলায় পাঁচ সন্তানের জননীকে গলা কেটে হত্যা
ভোলার ৪৩ এলাকা রেড জোন চিহ্নিত: আসছে লকডাউনের ঘোষনা
ভোলায় বিষের বোতল নিয়ে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকা
ভোলায় বাবা-মেয়ে করোনায় আক্রান্ত, ৪৫ বাড়ি লকডাউন
উৎসবের ঋতু হেমন্ত কাল
ভোলায় এবার কলেজ ছাত্র হত্যা, মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার
ভোলায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন করোনা রোগী: এলাকায় আতংক
ভোলার চরফ্যাশনে করোনা উপর্সগ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু
ভোলায় কুপিয়ে হত্যা করে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক এক
ভোলায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আরও ৬ জনের করোনা শনাক্ত