অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


লালমোহনে ৩০ বছর ধরে মৃত মানুষের গোসল ও দাফন করাচ্ছেন ওবায়দুল হক


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৪শে এপ্রিল ২০২৪ রাত ০৮:৫৭

remove_red_eye

৪৮৭

লালমোহন প্রতিনিধি : গত ৩০ বছর ধরে এলাকার কোনো মানুষের মৃত্যু হলেই ডাক পড়ে বৃদ্ধ মো. ওবায়দুল হকের। তিনি মৃত মানুষদের গোসল ও দাফন করান। ভোলার লালমোহন উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সাদাপুল এলাকার ফরাজি বাড়ির বাসিন্দা তিনি। এছাড়া ওবায়দুল হক স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক এবং সাদাপুল বাজার মসজিদের মুয়াজ্জেন।
বৃদ্ধ ওবায়দুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তখন ১৯৯৪ সাল। স্থানীয় এক মৌলভী আমাকে সঙ্গে নিয়ে যান মৃত এক ব্যক্তির গোসল ও দাফন করানোর জন্য। তিনিই আমাকে শিখান এ কাজ। সেই মৌলভীর মৃত্যুর পরে তারও মরদেহের গোসল ও দাফন আমি নিজ হাতে করিয়েছি। এরপর থেকেই চলছে কাজটি। টাকার জন্য নয়, পরকালে কিছু পাওয়ার জন্যই স্বেচ্ছায় করছি মৃত মানুষকে গোসল ও দাফন করানোর কাজটি। বিগত ৩০ বছর ধরে করে আসছি এ কাজ। এতো বছরে আনুমানিক এক হাজার মৃত মানুষকে গোসল ও দাফন করিয়েছি। যাদের মধ্যে ছিল- শিশু থেকে বৃদ্ধ মানুষ। যাদের কারও মৃত্যু হয়েছে স্বাভাবিকভাবে আবার কারও মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনায়।
তিনি বলেন, দিন আর রাত নেই; যখনই এলাকার কারও মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি, তখনই ছুটে গিয়েছি সেখানে। এ কাজ কেবল আমার গ্রামেই এখন আর সীমাবদ্ধ নেই, আশেপাশের অন্তত চার গ্রামের মানুষ কারও মৃত্যু হলে আমাকে ডাকেন। আমি গিয়ে বিনামূল্যে ওই ব্যক্তিকে গোসল ও দাফন করিয়ে দেই। যতদিন শরীরে শক্তি আছে ততদিন এ কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ। এ কাজ চালিয়ে যেতে আমি সকলের দোয়া কামনা করছি।
বৃদ্ধ ওবায়দুল হক আরো বলেন, ইতোমধ্যে মৃত মানুষকে গোসল ও দাফন করানোর বিষয়ে দুইজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারা এখন আমার সঙ্গে কাজ করছেন। অন্য কেউ যদি স্বেচ্ছায় এ কাজ করতে আগ্রহী হয়, তাহলে তাকেও সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সাদাপুলের ডা. আজহার উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মাহবুব আলম জানান, ওবায়দুল হক একজন ভালো মনের মানুষ। তিনি আমাদের বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক। চাকরির অবসর সময়ে তিনি বিভিন্ন মৃত মানুষকে স্বেচ্ছায় গিয়ে গোসল ও দাফন  করান। এটি সত্যিই মহৎ কাজ। আমার মনে হচ্ছে; ওবায়দুল হক মৃত মানুষদের অন্তিম যাত্রার পরম বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থাকছেন। তাকে অনুসরণ করে ভবিষ্যতে আরো মানুষ স্বেচ্ছায় এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন বলে আশা করছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন লালমোহন উপজেলার ফিল্ড সুপারভাইজার মো. আল-মামুন বলেন, এ উপজেলায় অনেকে স্বেচ্ছায় মৃত মানুষকে গোসল ও দাফন করান। যা সত্যিই মহান কাজ। তবে এ কাজ করা মানুষদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতার ব্যবস্থা নেই। তাদের সম্মানির ব্যবস্থার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো। এরপর তাদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে অবশ্যই তা সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে।