অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


চিকিৎসকের অসতর্কতায় চোখ মেলে পৃথিবী দেখলেও দেখা হয়নি মাকে


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩রা জানুয়ারী ২০২৪ রাত ০৯:৫৫

remove_red_eye

৩৭৩

লালমোহন প্রতিনিধি : ছয়দিনের নবজাতক শিশু। চোখ মেলে ঠিকই পৃথিবী দেখেছে, কেবল দেখা হয়নি মমতাময়ী মাকে। ছয়দিনের এই শিশুটি একদিন বড় হবে। এক সময় হয়তো সে পুরো পৃথিবী দেখবে। কেবল দেখা হবে না তাকে যিনি পৃথিবী দেখিয়েছেন সেই মমতাময়ীকে। কারণ তিনি আর নেই, সন্তান জন্মের পরেই পরপারে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলে দালাল বাড়ির মো. ইলিয়াছের নবজাতক ছেলে শিশুর সঙ্গে। শিশুটি এখন পরম যতেœ বেড়ে উঠছে লালমোহন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নয়ানীগ্রামে তার ফুফু ইয়াসমিনের কোলে।
হৃদয়বিদারক এই ঘটনা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে এক চিকিৎসকের অসতর্কতা। ওই চিকিৎসক লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহনাজ পারভীন। গত বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় লালমোহন হাসপাতাল গেট সংলগ্ন নিউ গ্রীণ লাইফ ডায়াগনিস্টিক অ্যান্ড হসপিটালে শিশুর জন্মের জন্য তার মাকে সিজার করান ডা. শাহনাজ পারভীন। সিজারের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রক্তক্ষরণ থামাতে না পেরে প্রসূতি মোসা. শিল্পীকে তড়িগড়ি করে ভোলায় রেফার্ড করা হয়। তাৎক্ষণিক পরিবারের লোকজন দ্রæত প্রসূতি শিল্পীকে নিয়ে ভোলা সদরের ফাতেমা মেমোরিয়াল হসপিটালে যান। ওই রাতেই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রসূতি শিল্পী। তিনি উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ডাওরি বাজার এলাকার নওকড়ি বাড়ির মো. আনসারের মেয়ে। গত পাঁচ বছর আগে চরভূতা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলে দালাল বাড়ির ইলিয়াছের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। নবজাতক এই শিশুটি তাদের তৃতীয় সন্তান। এরআগের দুই সন্তান স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে জন্ম নেয়।
মৃত প্রসূতি মোসা. শিল্পীর স্বামী ইলিয়াছ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আমার স্ত্রীকে লালমোহনের গ্রীণ লাইফ হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করাই। এরপর বিকালে তার প্রসব বেদনা উঠে। তখন ডা. শাহনাজ পারভীন কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন। পরে ওইসব পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার জানান; আমার স্ত্রীকে সিজার করাতে হবে। তবে তাকে নরমাল ডেলিভারি করাতে অনুরোধ করি। তখন ওই ডাক্তার জানান; সিজারই করাতে হবে। এ জন্য সন্ধ্যার দিকে বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে সিজার করানোয় সম্মতি দেই। এরপর তার সিজার করান ডা. শাহনাজ পারভীন। সিজারের পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ জন্য আমাদের দ্রæত ভোলা যেতে বলা হয়। তখন জরুরীভাবে ভোলায় গিয়ে ফাতেমা মেমোরিয়াল নামে একটি বেসরকারি হসপিটালে আমার স্ত্রী শিল্পীকে ভর্তি করাই। সেখানে পরপর তাকে চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। তবে কোনোভাবেই রক্তক্ষরণ কমেনি। যার ফলে ওই রাত ৪ টার দিকে মারা যায় আমার স্ত্রী মোসা. শিল্পী।
তিনি আরো জানান, আমার স্ত্রীর মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে গেছে। নিমিষেই তছনছ হয়ে গেছে আমাদের সাজানো সংসারটি। কোনো উপায় না পেয়ে আমার নবজাতক ছেলেকে বোনের কাছে দেই। এখন সে তাকে পালছে। আমার বোন ফুটফুটে নবজাতক ছেলেটিকে এখন সুন্দর করে লালন-পালন করছেন। তার কাছেই বড় হবে সে। তবে আমার স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য ডাক্তার শাহনাজ পারভীনই দায়ী।
ভোলার ফাতেমা মেমোরিয়াল হসপিটালের চিকিৎসক ডা. ফয়সাল আহমেদ বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই তাকে আমাদের এখানে আনা হয়েছিল। এরপর তার শরীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রেসার ও পালস্ পাওয়া যায়নি। যার জন্য তাকে আমরা ভর্তিও করতে চাইনি। তবে ওই রোগীর স্বজনরা রিস্কভন্ডে স্বাক্ষর দিয়ে এখানে ভর্তি করান। তবে ওই রাতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহনাজ পারভীন জানান, সিজারের পর রোগী বেশ কিছু সময় আমাদের পর্যবেক্ষণে ছিল। তবে কিছু সময় পরে রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও জরায়ু সংকোচন না হাওয়ায় তাকে আমরা ভোলায় রেফার্ড করি। সেখানে ওই রোগী ৭ থেকে ৮ ঘন্টার মতো চিকিৎসাধীন ছিল। ওই রোগীর চিকিৎসায় আমাদের কোনো ত্রæটি ছিল না।