অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


লালমোহনে অবুঝ দুই সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা সালমা


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯শে ডিসেম্বর ২০২৩ রাত ১০:৪৩

remove_red_eye

২৫৫

লালমোহন প্রতিনিধি : মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন স্বামী। এখন অবুঝ দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মোসা. সালমা। ছোট ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবেন, কি করবেন তা-ই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। স্বামীর মৃত্যু শোকে ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছেন সালমা। স্বামীর পরপারের পাড়ি যেন মানতেই পারছেন না তিনি। সালমার স্বামী মো. বাচ্চু ভোলার লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ফুলবাগিচা এলাকার মাঝি বাড়ির মৃত আব্দুস শহিদের ছেলে। সোমবার রাতে পার্শ্ববর্তী চরফ্যাশন উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান মো. বাচ্চু। মঙ্গলবার দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
সালমা জানান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে হোটেল ব্যবসা করতেন আমার স্বামী বাচ্চু। দুই সন্তানসহ সেখানেই থাকতাম। গত দুই মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ থাকায় সোমবার সকালে সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে আসি। এদিন বিকালে বাচ্চু তার আত্মীয়সহ চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচায় কাজের উদ্দেশ্যে যান। সেখান থেকে মোটরসাইকেল যোগে ফেরার পথে রাতে চরফ্যাশন পৌরসভার পেট্রোল পাম্প এলাকায় পৌছালে আরেকটি মোটরসাইকেল তাদের ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় তিনিসহ ওই মোটরসাইকেলের মোট ৩জন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া। সেখানে আমার স্বামী মো. বাচ্চু মারা যান।
তিনি আরো জানান, আমার স্বামী বলেছিলেন গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে আবার ব্যবসা শুরু করবেন। তখন আর কোনো কষ্ট করতে হবে না। তবে এখন তিনিই নেই। তার মৃত্যুতে মুহূর্তেই সব বদলে গেছে। আমার ৩ বছরের মেয়ে নিহা ও ৮ বছরের মেয়ে হাফসাকে নিয়ে এখন আমি কি করবো, কিছুই ভেবে উঠতে পারছি না। আমার স্বামীই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তার আয়েই চলতো সংসার। অন্যদিকে ব্যবসা করতে গিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের আশা ও মানবিক নামে দুইটি এনজিও থেকে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকার মতো ঋণ নেন আমার স্বামী। সেখানের কিছু টাকা পরিশোধও করেছিলেন তিনি। তবে এখন তিনি নেই, আমি সন্তানদের নিয়ে চলবো কিভাবে আর ঋণ-ই বা পরিশোধ করবো কিভাবে। এখন চারদিক যেন অন্ধকার মনে হচ্ছে।
নিহত বাচ্চুর মা শাহিনূর বেগম বলেন, বাচ্চুর বাবাও গত বছর দুইয়েক আগে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে মারা গেছেন। আমাদের পারিবারিক অবস্থাও ভালো না। আমার পুত্রবধূ সালমা এখন তার দুই মেয়েকে নিয়ে কি করবে তাই বুঝতে পারছি না। নিজেদের সম্পত্তি বলতেও নেই কিছুই। আমার দুই নাতনিকে নিয়ে তাদের মায়ের বাকি দিন পার করতে সহযোগিতা কামনা করছি।
বাচ্চুর ভাই মো. শামিম জানান, মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাশন থানা থেকে ভাইয়ের লাশ এনেছি। দুপুরে জানাযা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। ভাই মারা গেছেন, তবে তার দুই কন্যা সন্তান ও স্ত্রীর কি হবে; এখন কেবল এটাই ভাবছি। কোনো সহযোগিতা পেলে তাদের জন্য ভালো হতো।   
দুর্ঘটনার বিষয়ে চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তি লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা। কোনো অভিযোগ না থাকায় মঙ্গলবার সকালে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে। অন্যদিকে ওই দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেলের আরো ৪ জন ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্নস্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, নিহত বাচ্চুর পরিবারকে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করবো।