অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


দেশব্যাপী খ্যাতি ভোলার টক দই


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ই নভেম্বর ২০২১ রাত ১০:০৮

remove_red_eye

১৪৬৯




এম শরীফ  আহমেদ : প্রতিটি জেলার কিছু জনপ্রিয় খাবার থাকে। যা খুবই মুখরোচক। এসব খাবারের জন্য ঐসব জেলা অনেক সময় পরিচিত হয়। এমন খাবারের প্রতি সবারই লোভ থাকে।অনেকে মুখরোচক খাবার খেতেই ঘুরে থাকেন। আজ এমন এক মুখরোচক খাবারের কথা বলবো যার নাম শুনলে যে কারও জ্বীভে জল এসে যাবে।
আজকে বলবো ভোলার জনপ্রিয় খাবার মহিষের দুধের দইয়ের কথা। এ খাবারের নাম জানা নেই এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে।এ খাবার শিশু থেকে বয়ষ্ক সবার কাছে প্রিয়। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এ খাবার খেতে ভালোবাসে।
ভোলায় পারিবারিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক যেকোনো অনুষ্ঠানে ভারী  খাবার থাকলে দধি থাকবেনা এমনটা হতেই পারেনা। ছোট, বড় যেকোনো অনুষ্ঠানে  এ খাবার তুঙ্গে। তবে অনুষ্ঠানে খাবারের শেষে বেশিরভাগ মানুষ  ভাতের সাথে দধি খেলেও নানাভাবে খাওয়া যায় এ খাবার।

নাস্তা হিসেবেও দধি খাওয়া যায়।দধিকে চিড়ার সাথে হালকা মুড়ি ও চিনি মিশিয়ে মজাদার নাস্তা তৈরী করা যায়।গরমের দিনে দধির সাথে হালকা পানি ও চিনি মিশিয়ে ঘোল তৈরি করা যায়।এটা গরমের দিনে দেহকে ঠান্ডা রাখে। পানির পিপাসা মিটায়।
শুধু স্বাদেই দই সীমাবদ্ধ নয়।এই দইয়ে রয়েছে  প্রচুর ওষধি গুণ। স্বাস্থ্যবিদরা বলছে দইয়ে ক্যালসিয়াম,প্রোটিন, ভিটামিনসহ অন্যান্য উপদান রয়েছে;যা আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী।সবচেয়ে হজমে সহায়তা করে এ খাবার।
বহু বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দধি তৈরীর কারিগর আলহাজ্ব মোঃ হাফেজ নুরুজ্জামান এর সাথে আলাপকালে জেনে নেই জনপ্রিয় এ খাবারের প্রস্তুত প্রণালীর কথা। তিনি একটু মুচকি হেসে দিয়ে বলেন,আসলেই এ দধি তেরীতে তেমন কোনো কেরামতি নেই। এটা কোনো কঠিন বিষয় নয়।একটু খেয়াল করলেই  দধি তেরী করা সম্ভব। তিনি মুহুর্তেই বর্ণনা দিয়ে দিলেন।
প্রথমে একটি মাটির পাত্রে(টালি) পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর দুধগুলোকে ভালোভাবে ছেঁকে মাটির পাত্রে স্থির জায়গায় রেখে দিলে হয়ে যাবে মুখরোচক টক দই।গরমের দিনে ৭-৮ ঘন্টা এবং শীতের দিনে ১০-১২ ঘন্টা সময় লাগে দধি তৈরী হতে।
আলাপকালে প্রবীণ সাংবাদিক ও ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বলেন, ভোলা বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ। এখানে ছোট-বড় বহু চর রয়েছে। এসব কারণে এখানে মহিষ পালন করা অনেকটা সুবিধা। প্রায় ২০০বছরের বেশি সময় ধরে এ মহিষের দুধের সুনাম রয়েছে এ জেলার। দিন দিন এ খাবারের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলছে। তবে জনসংখ্যা বাড়ায় দ্বীপে ঘরবাড়ি তৈরী হওয়ায় ডোবা, নালা অনেকটা কমে যাওয়ায় মহিষ পালনে হিমসিম খাচ্ছে মহিষ মালিকরা। এজন্য মহিষ  দিন দিন জবাই করা হচ্ছে, তাই মহিষের সংখ্যা অনেকটা কমে যাচ্ছে।
কোথায় পাওয়া যায়ঃ ভোলা পৌর শহরের ঘোষপট্রি হলো মহিষের দুধের দইয়ের প্রধান প্রাণকেন্দ্র। এ পট্রিতে ঢুকলেই আপনাকে স্বাগতম জানাবে দোকানদারেরা। শুধু ঘোষপট্রিতে সীমাবদ্ধ নয়। ভোলা শহরের খলিফা পট্টি মসজিদ, দিদারের গলিসহ বিভিন্ন পয়েন্ট এ এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ দধি পেয়ে যাবেন।তবে যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য লাগলে অবশ্যই আগে অর্ডার করতে হবে।

দাম এবং কেমন করে বিক্রি হয় এ দধিঃ মহিষের দধি সাধারণত মাটির পাত্রে (টালিতে) করে বসানো হয়। সে অবস্থায় উপরে শুধু  পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়।বেশিরভাগ  দুই ধরনের টালী থাকে। একটি দেড় লিটার আরেকটি দুই লিটার। দেড় লিটারের ১৫০-৩০০টা এবং দুই লিটারের দাম  ২০০-৪০০টাকা।মূলত দুধের দামের উপর দইয়ের বাজার উঠানামা করে।
ঢাকাতে বসে কিভাবে খাবেনঃ প্রযুক্তির এ যুগে ঘরে বসে যেকোনো জিনিস হাতে পাওয়া অনেকটা সম্ভব হলেও ভোলার টক দই ঘরে বসে পাওয়া দুষ্কর ।"ভোলার দধি" নামে প্রতিষ্ঠানটি একটা সময় সদরঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দিলেও তারাও এখন আর সার্ভিস দিচ্ছে না ডেলিভারির নানা সমস্যার জন্য।