অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


রাস্তার পাশে অসহায় বৃদ্ধার ছোট সংসার


অচিন্ত্য মজুমদার

প্রকাশিত: ৯ই জানুয়ারী ২০২১ রাত ০৯:৩১

remove_red_eye

৯১৯


অচিন্ত্য মজুমদার : ভোলার শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার। ব্যস্ততম এই এলাকার রাস্তার পাশের পরিত্যক্ত একটি মাছ বাজারের এক কোনে ভাঙা ফ্রিজের কিছু অংশ আর ময়লার বস্তা সাজিয়ে বসবাস করছে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। তার কাঁথা-কাপড়, হাড়ি-পাতিল, সহায় সম্বল আর পাতানো সংসারে জীবন খেলাঘর। তাতেই কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে জেলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের চরনিউটন গ্রামের বৃদ্ধা জান্নাত বেগম।
১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় রিকশা চালক রুস্তম আলীর সাথে। বিয়ের পরে স্বামীর বাড়িতে থাকলেও একসময় তাকে ছেড়ে স্বামী ঢাকা চলে যায়। এরপর থেকে চরনিউটন গ্রামে ছোট্ট একটা ঘরে তার জীবন চলছিল। মানুষের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে কোন রকমে পেট চালিয়ে দুই পুত্রসন্তান মাজেদ ও রহমানকে নিয়ে শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, মেঘনার কড়াল গ্রাসে ভিটে মাটি সব হারিয়ে তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। সন্তানদের নিয়ে একের পর এক ঠিকানা খুঁজে ফেরে জান্নাত বেগম। একসময় তার সন্তানরা নিজেদের সংসার শুরু করেন। কিন্তু সেই সংসারে ঠাঁই হয় না মায়ের। শুরু হয় জান্নাতের ঠিকানাহীন ছন্নছাড়া জীবন। কখনো অন্যের বাড়ি কাজ করে, কখনো দরগাহ্ থেকে মানুষের কাছে হাত পেতে জীবন চলছিল। গত চার মাস আগে সেখান থেকেও তাকে বের করে দেয়। এরপর কোথাও ঠাঁই না পেয়ে বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত মাছ বাজারের এক কোনে জীবনযাপন শুরু করেন। সরেজমিনে আলাপকালে অসমাপ্ত জীবনের মাঝ পথে দাঁড়িয়ে, জীবনের শেষ প্রান্তের এমন সব বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা জান্নাত বেগম।
রাস্তার পাশে ধুলো-ময়লার এক কোনে মাথা গোজার ঠাঁই হলেও নেই বিশুদ্ধ পানি কিংবা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। মানুষের কাছে হাত পেতে যে কয়টা টাকা জোটে তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে দিন চলে যায়।
এর চেয়ে ভালো থাকতে চান কিনা ? জানতে চাইলে বয়সের ভারে নতজানু বৃদ্ধা জান্নাত বলেন, অনেকেই চেষ্টা করেছে এখান থেকে তাড়িয়ে দিতে। রাস্তার পাশে থাকা দরিদ্র যাযাবর মানুষদের জীবনে দুঃখ বারো মাসই লেগে থাকে। তাই কোনোরকমে একটা মাথা গোজার একটা ঠাঁই হলে বাকি জীবন অনায়াসে চলে যাবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক মাস ধরে রাস্তার পাশের টলঘরে এই বৃদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই কনকনে ঠান্ডায় যেখানে মানুষ দালানের ঘরে লেপ কম্বর মুড়ি দিয়ে শীতে নিবারন করতে পারেনা। সেখানে এই বৃদ্ধা অনেকটা খোলা যায়গায় একটা পাতলা কম্বল দিয়ে রাত কাটায়। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। এমন একটি ঘর পেলে বৃদ্ধা এই নারী একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন বলে জানান তারা।