অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকেই ভোলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ই ডিসেম্বর ২০২০ রাত ১০:৩৮

remove_red_eye

৬৩১



হাসনাইন আহমেদ মুন্না : ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকেই ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর একদিন আগে ভারতীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ছিলো অদম্য। তারা (মুক্তিযোদ্ধারা) নিশ্চিত যে বীজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ডে (ওয়াবদা) অবস্থানরত পাকবাহিনী অনেকটাই নজরবন্দী হয়ে পড়ে। তারা বাইরে বেড় হওয়া বন্ধ করে দেয়। ওয়াবদার চারপাশে অবস্থান নেয় মুক্তিবাহিনীর দামাল ছেলেরা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন পূর্বদেশ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি এম. হাবিবুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ভারত আমাদের স্বীকৃতি  দিয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দের সীমা থাকেনা। আমাদের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। ৭ তারিখ হাই কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান ও আলী আকবর (বড় ভাই) এর নেতৃত্বে তিনি হাবিবুর রহমান, মো: ছাদেক, আব্দুল মমিন টুলু (বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান), নানু ভাই, শষি, মো: সাইফুল্লাহ, মো: ছালেহ আহমেদ, গাজী জয়নাল আবেদিন, মো: দোস্ত মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম,মজিবুর রহমান মজিব,রফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকে মিলে ওয়াবদার চতুর্দিকে অবস্থান নেন। কিন্তু ওয়াবদার মধ্যে থাকা পাকবাহিনীর হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকায় সরাসরি আক্রমন করেনি মুক্তিযোদ্ধারা। তবে পরিকল্পনা চলছিলো কিভাবে তাদের উপর হামলা করা যায়।
তিনি জানান, পরে ১০ ডিসেম্বর রাতে ওয়াবদা ঘেরাও এর পরিকল্পনা নেই আমরা মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু তারা পরাজয় জেনে আগেই সটকে পরে সেখান থেকে। ১০ তারিখ সকালে তারা ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে খোলা ট্রাকে করে লঞ্চ ঘাটে যায়। সেখান থেকে শান্তিবাহিনীর সেক্রেটারি ইলিয়াস মাস্টারের কার্গোযোগে লঞ্চযোগে পালাবার চেষ্টা করে। রণাঙ্গণের এই বীর যোদ্ধা আরো জানান, কিন্তু ততক্ষণে তাদের পালিয়ে যাবার খবর পেয়ে ভোলার খালে আমরা প্রতিহতের চেষ্টা করি। এসময় পাকবাহিনী স্টেনগানের গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। এসময় তারা তাদের দোসরদের (রাজাকার) নিয়ে যায়। কিন্তু পথিমধ্যে চাঁদপুরের কাছে গেলে মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় কার্গোটি বিধ্বস্ত হয়। মারা পরে পাকসেনারা।
এ ব্যাপারে সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডর মো: দোস্ত মাহমুদ বলেন, ৭ ডিসেম্বর আমরা সদরের শীবপুর, আলীনগর, রতনপুরসহ ওয়াবদার চারপাশে ভাগে ভাগে অবস্থান গ্রহণ করি। এর আগে মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতখান থানা, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যসন, তজুমদ্দিন, মনপুরা থানা দখল করে নেয়। সেসব এলাকায় মুক্তিবাহিনীর ছোট ছোট দল অবস্থান নেন।  দোস্ত মাহমুদ বলেন, বলা যায় ৭ ডিসেম্বর ভোলা এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ’র মধ্যে চলে আসে আমাদের। যার ফলশ্রæতিতে চুরান্ত বীজয় আসে আমাদের। পাকসেনাদের পালাবার খবরে হাজার হাজার জনতা রাজপথে নেমে আসে সেদিন বিজয় উল্লাসে। এক অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় সেদিন। যা ভাষায় ব্যাক্ত করা যায়না।