অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকারে নেমেছে জেলেরা


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ঠা নভেম্বর ২০২০ রাত ১০:৪৮

remove_red_eye

৬৪৮


হাসনাইন আহমেদ মুন্না/ এআর সোহেব চৌধুরী : জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত মধ্যরাত থেকে পুনরায় ইলিশ শিকার শুরু হয়েছে। জেলার প্রায় ২ লাখ জেলে নতুন উদ্দ্যেমে নদীতে মাছ শিকারের মেতে উঠে। রাত ১২ টা ১ মিনিটে নদীতে নামার কথা থাকলেও বিকালের পর থেকে বহু জেলে নদীতে মাছ শিকারে নেমে পরে।  জেলেরা আশা করছেন জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। সেই ইলিশ বিক্রি করে বিগত সময়ের লোকসান পুষিয়ে লাভবান হবেন তারা। ভোলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসম নির্বিঘœ করতে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ শিকার, পরিবহন, বিক্রি, প্রদর্শন ও মজুদ নিষিদ্ধ করে সরকার। মা ইলিশ রক্ষায় এবারের অভিযান সফল হয়েছে। এ বছর জেলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬৫ হাজার মে. টন।  
স্থানীয় সূত্র গুলো জানান,ইলিশের মৌসুমে নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা না পেলেও গভীর সাগরে ইলিশ পাওয়ার আশায় ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে দল বেঁধে বেড়িয়ে পড়ছেন জেলেরা। তাদের প্রত্যাশা নিষেধাজ্ঞার ফলে আগের চেয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সাগরে। এদিকে আজ সকাল থেকেই আড়ৎদাররাও তাদের আড়তে হাক ডাক দিয়ে মাছ বিক্রি শুরু করেছেন। ইলিশ রপ্তানিতে নতুন করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন এসব আড়ৎদাররা। ভোলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মৎস্যঘাটগুলোতে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি আড়ৎদাররা মাছ কেনার জন্যও ভিড় জমিয়েছেন। চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মৎস্যঘাট থেকে সাগরে মাছ শিকার করা জেলেরা জানান, গত ২২ দিন সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নদী ও সাগরে যেতে না পাড়ায় ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে অনেকেই নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারী সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, নদী ও সমুদ্রে  মৎস্যসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদ সুরক্ষায় চলতি বছরের ১৪অক্টোবর থেকে ৪নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞারোপ করে সরকার। ইলিশের প্রজনন ও জাটকা নিধনে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ৪ নভেম্বর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা না থাকায় অবাধে মৎস্য শিকারে নেমেছে জেলেরা।   
সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: আসাুজ্জামান বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলার ১ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবারের জন্য ২০ কেজি করে চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া সরকারের সরকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ফলে অধিকাংশ জেলেই ইলিশ শিকার থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। তারপরেও যারা আইন ভঙ্গ করেছে কাউকেই ছাড় দেয়া হয়নি। মৌসুমের প্রথম ৪ মাসেই ধরা পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার মে. টন ইলিশ।
জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো: নুরুল ইসলাম মেম্বার জানান, সরকারের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের ফলে নদীতে ইলিশের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে শীতকালেও প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে জেলেদের জালে। তাই মা ইলিশ সংরক্ষণে এই কার্যক্রমকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ফলে জেলেদের কষ্ট হলেও অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করেছে। সামনের দিনগুলোতে ব্যাপক ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উপজেলা সদরের ধনীয়া ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা জেলে রহমান আলী, বরকত মিয়া, ফয়েজ হোসেন ও নোমান গাজী বলেন, নদীতে মাছ ধরেই তাদের সংসার চলে। আর এসব মাছের মধ্যে ইলিশ মাছই প্রধান। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন ২০ কেজি করে চাল পেলেও সংসার চালাতে তাদের কষ্ট হয়েছে। তবুও সরকারী আইন মান্য করেছেন নিজেদের ভালোর জন্য। কারণ নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকলে নদীতে ইলিশ বেশি পরে, তারা তা এখন সবাই জানেন।
অপর জেলে মোস্তাফিজ ও হারুন মাইলতা বলেন, সরকারের ২০ কেজি কওে চাল বিতরণের পাশাপাশি কিছু নগত অর্থ সহায়তা দিলে তাদের কষ্ট কম হবে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে।
অন্যদিকে ২২ দিন বন্ধ থাকার পর মৎস্য ঘাট ও আড়ৎদারদের ব্যস্ততাও বেড়েছে। সকালে মাছ ঘাট ও আড়ৎগুলোতে আবার হাক-ডাক শুরু হবে, সেজন্য সব কিছু পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ছুটিতে যাওয়া শ্রমীকরাও ফিরেছেন কাজে। একই ব্যস্ততা চলছে জেলার বরফকলগুলোতেও। দীর্ঘ ছুটি শেষে সবাই কাজে ব্যস্ত।
সদর উপজেলার শীবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল মাছ ঘাটের আড়ৎদার মো: নিজামউদ্দিন ও আল-আমিন জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার মাছ উঠবে তাদের আড়তে। তাই বুধবার সকাল থেকে সব পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, এবছর সকলের সহযোগিতায় মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই সফল হয়েছে। সাধারণত একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ইলিশ ৫ লাখ থেকে ২৩ লাখ ডিম ছাড়ে। ধারনা করা যাচ্ছে এবছর নির্বিঘেœ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। যা থেকে আগামী দিনে ব্যাপক ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।