অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় বন্যা: বিশুদ্ধ পানির সংকট, চুলা জ্বলছে না অনেকের ঘরে


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬শে জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭:৪২

remove_red_eye

৩১৪





বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে অতি জোয়ারে ভোলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে, নিন্মাঞ্চল, চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।  বিপদসীমা অতিক্রম করে ওঠা পানিতে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নসহ ৭৪টি চরাঞ্চলের বাড়িঘর, মাছের পুকুর,  ফসলের খেত ডুবে গেছে। কাঁচা রাস্তাঘাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার বিকালেও অতিজোয়ারের পানিতে ইলিশা ফেরিঘাট প্লাবিত হয়ে যানবাহন ফেরিতে ওঠা নামা ব্যহত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দুবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে ভোলা সদরের রাজাপুর, কাচিয়া, ধনিয়া, মাঝের চর, রামদাসপুর দৌলতখানের মদনপুর, মেদুয়া, হাজিপুর, তজুমদ্দিনের চর জহিদন উদ্দিন, চর মোজাম্মেল, লালমোহনের কচুয়াখালীর চর, চরফ্যাশনের ঢালচর, চর পাতিলা ও মনপুরার কলাতলীর চরসহ ৩০ গ্রাম। ফলে এসব গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।  
ভোলা সদরের রাজাপুর ঘুরে দেখা গেছ, বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি আর পানি। নি¤œাঞ্চলে বাঁধ না থাকায় এভাবেই জেলার ৩০ গ্রামে লোকালয়ে প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তা ঘাট। গত কয়েকদিন ধরে পানি বাড়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্গত এলাকায় দুর্ভোগের পাশাপাশি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে।  
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের- ১নির্বাহি প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে গত শনিবার থেকে জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গত কয়েকদিন ধরে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ৮০ থেকে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নি¤œাঞ্চল, বিশেষ করে জোয়ারের সময় পানি উঠে যাচ্ছে অনেকের ঘরে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বাঁধ না থাকার কারণে এসব চরাঞ্চল বেশি প্লাবিত হচ্ছে । ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ১,২, ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডসহ রামদাসপুর, ভোলার চর, কানিবগার চর, চর মোহাম্মদ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এসব অঞ্চল বাঁধের বাইরে এবং নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরে। এসব এলাকায় খেতে আমনের বীজতলা, লাউ, ঝিঙ্গা, শশা ও দুন্দলের খেত জোয়ারের পানিতে ডুবে আবার ভেসে উঠে। প্লাবিত হয়েছে জনতাবাজার এলাকার পিচঢালা সড়ক, মাটির সড়ক, মানুষের বাড়িঘর ও পুকুর। কোথাও কোথাও কাঁদা জমে গেছে সড়কে।
২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুহুল আমিন মিজি বলেন, জোয়ার এলে তার ঘরের মধ্যে ২-৩ হাত পানি উঠে।  স্ত্রী ও পুত্রবধুকে চকির মাচার উপর তুলে নিরাপদে রেখে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই মসজিদেও পানি উঠলে নামাজ পড়তে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
রাজাপুরের অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে জোয়ারের পানিতে তোরে। অনেক পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে গেছে।
জোয়ারের পানিতে ভোলার ভেলুমিয়া ও ভেদুরিয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় বিস্তীর্ণ এলাকার সবজিখেত, আউশ খেত, মাছের পুকুর,  বাড়ি ঘর প্লাবিত হচ্ছে।
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চরগাজির বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, জোয়ারের পানি উঠে নামতে না পারায় চরগাজীর বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।  সবজিখেত পঁচে যাচ্ছে।  
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো:ফারুক দৌলত বলেন, মদনপুরের বাড়িঘর এমনি স্বাভাবিক নিয়মের চাইতে ৪-৫ হাত উঁচু করা হয়।  সেইসব বাড়ি, বাড়ির পুকুর,  ফসলের খেত, রাস্তাঘাট, হাটবাজার সব ৬-৭ হাত পানির নিচে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ কিমি কাঁচা সড়কের ক্ষতি হয়েছে।
এ উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের নেয়ামতপুর চরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, উচ্চ জোয়ারে চরের শতাধিক ঘর, ফসলিখেত, গবাদিপশুর খামার প্লাবিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  দৌলতখান উপজেলার ভবানীপু ইউনিয়নের চর হাজারি, হাজিপুর ইউনিয়ন,  তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহিরুদ্দিন, চর মোজাম্মেল,  বাসনভাঙার চর, চর রাইয়ান প্লাবিত হচ্ছে জোয়ারের পানিতে।  
মনপুরা উপজেলার কলাতলি ইউনিয়নের চারপাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর, পুকুর, ফসলিখেত, হাটবাজার প্লাবিত হচ্ছে।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার ও মনির বাজারের পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হাই বলেন, গত মঙ্গলবার বিকালের জোয়ারে ২ ঘন্টা পানিতে বন্দী ছিলেন। শুধু তিনি নয়  ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার ঘরের মাচায়, খাটের ওপর, চেয়ারের ওপর বন্দী ছিল। এমন কোনো স্থান নেই যেখানে পানি উঠতে বাকি ছিল। জোয়ার নেমে যাবার পরে বেরিয়ে আসে ধ্বংস যজ্ঞ। রাস্তাঘাট সব ভেঙে চুরে গর্ত হয়ে গেছে।  
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরও বলেন, রিমালে কলাতলী ইউনিয়নের প্রায় ৭০০ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।  অনেকে সেই বিধ্বস্ত ঘর এখনও সংস্কার করতে পারেনি। তারমধ্যে আবার এই উচ্চ জোয়ার।  এ ইউনিয়নের চারপাশে বাঁধ দরকার।  
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর,  কুকরিমুকরি ও মুজিব নগর ইউনিয়ন, তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহিরুদ্দিন, দৌলতখানের মদনপুর, ভোলা সদরের রাজাপুর, ভেলুমিয়া ও ভেদুরিয়া ইউনিয়নে বন্যা-জলোচ্ছ¡াস নিয়ন্ত্রণে বাঁধ না থাকায় জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, আগামী তিন/চারদিনের মধ্যে পানি কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। পূর্ণিমার ও উজানের পানির চাপে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তবে কোথাও বাঁধের ক্ষতি হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসান মাহমুদ বলেন, তাঁরা এবার শীতে কলাতলী, চর মোজাম্মেল ও চর জহিরুদ্দিন মিলে একটি এবং দৌলতখান উপজেলার চর হাজারি, নেয়ামতপুর, মদনপুর ও সদর উপজেলার কাচিয়ার চর মিলে একটি এবং ভেদুরিয়া-ভেলুমিয়া মিলে একটি করে তিনটি ফোল্ডার নকশা তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে জমা দেবেন। যদি পাশ হয় তখন বাঁধ ও জলকপাট নির্মাণ হবে। আর রাজাপুরে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে আগামী শীতে হয়তো শেষ হবে।