অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের দৌড়াত্ম


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৫শে জুলাই ২০২৪ বিকাল ০৫:১০

remove_red_eye

২২১

লালমোহন প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌড়াত্ম থামছেই না। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে পৌরশহরের বেশ কিছু  ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নির্ধারিত ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী দালালের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এসব দালালদের পদচারণা বেশি থাকে। এদের বেশির ভাগই নারী। অদৃশ্য ক্ষমতা বলে এরা কর্তব্যরত চিকিৎসকদের রুমেও প্রবেশ করেন।
চিকিৎসকরা রোগীদের জরুরি কোনো পরীক্ষা করতে বললে ওই কাগজ নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন তারা। এসব দালালের দৌড়াত্মের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের অন্তত ২১টি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগীরা। দালালদের ফাঁদে পড়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকে গিয়ে পরীক্ষার ধরণভেদে কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করছেন রোগীরা। ওইসব দালালদের কর্মকাÐে ক্ষোভ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক চিকিৎসকের মধ্যেও। লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ রোগীদের দৌড়াত্ম দেখে মনে হবে এদের লাগাম টানার যেন কেউই নেই।
নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক জানান, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকের নির্ধারিত কিছু কর্মী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের ভূমিকা পালন করেন। রোগীদের প্রয়োজনে আমরা কোনো টেস্ট লিখলে আমাদের সামনেই রোগীদের থেকে ওই কাগজ নিয়ে তারা টানাটানি শুরু করেন। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই অনেক পরীক্ষা স্বল্প খরচে করানো সম্ভব হয়। ওই দালালরা ছলে-বলে-কৌশলে রোগীদের ডায়াগনস্টিকে নিতে বাধ্য করেন। এতে করে নি¤œ আয়ের সাধারণ রোগীদের রীতিমতো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সাধারণ রোগীদের কথা বিবেচনা করে দ্রæতই এসব দালালদের লাগাম টানা উচিত।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে দালালদের ফাঁদে পড়া কয়েকজন রোগী বলেন, ডাক্তাররা আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা করাতে বলেছেন। এরমধ্যে অনেক পরীক্ষা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই হয়। যা আমরা জানতাম না। ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দালালরা কাগজ নিয়ে নয়-ছয় বুঝিয়ে আমাদের  নিয়ে গেছে ডায়াগনস্টিকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তুলনায় ওই ডায়াগনস্টিকে গিয়ে আমাদের কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। টাকা অনেক হিসেব করে আমাদের ব্যয় করতে হয়। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে থাকা এসব দালালরা তাদের স্বার্থের কথা ভেবে আমাদের ডায়াগনস্টিকে নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করাচ্ছেন। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের হয়রানি থেকে রক্ষা করতে ‘দালালমুক্ত লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’ গড়তে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের ইনর্চাজ মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বল্প খরচে ২১ ধরনের টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা চাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা সাধ্যের মধ্যে স্বল্প মূল্যে এখান থেকেই সেবা গ্রহণ করুক। আমরা রোগীদের স্বার্থে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীই গরীব এবং অসহায়। আমরা যখন প্রয়োজনে রোগীদের কোনো টেস্ট দেই তারা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে তাদের ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যায়। অথচ আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌড়াত্ম কমাতে এরইমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে আগের তুলনায় দালালদের দৌড়াত্ম অনেকটা কমেছে। লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে পুরোপুরি দালালমুক্ত করতে আমরা আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।