অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


একই কক্ষে মামাতো-ফুফাতো ভাইয়ের মৃত্যু


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২শে জুন ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯

remove_red_eye

২৪৪

                   মানতে পারছেন না স্বজনরা

লালমোহন প্রতিনিধি : মো. ইমন ও ফরহাদ। এদের মধ্যে ইমনের বয়স ২৩ এবং ফরহাদের বয়স ১৮। তারা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। এই দুইজন ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরকচ্ছপিয়া এলাকার বাসিন্দা। তারা চাকরি করতেন রাজধানীর পল্টন থানা এলাকার কালভার্ট রোডের রুপায়ন তাজ ভবনের মাতৃভূমি গ্রæপ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাত পৌনে দশটার দিকে ওই অফিসের একটি কক্ষ থেকে তাদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে মদ্যপানের বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ বিষয়টি মানতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজনরা।
ইমন ও ফরহাদের ময়না তদন্ত শেষে তাদের লাশ শুক্রবার বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপর স্বজনরা লাশ নিয়ে শনিবার সকালে লালমোহনের বদরপুর ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া এলাকায় অবস্থিত গ্রামের বাড়িতে আসেন। পরে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইমন ৯ বছর ধরে ঢাকায় মাতৃভূমি গ্রæপে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন। অস্বচ্ছল পরিবারে তিন ভাই এবং এক বোনরে মধ্যে তিনি সবার ছোট। চাকরির করে পাওয়া  বেতন বাড়িতে পাঠিয়ে কৃষক বাবাকে সংসার চালাতে সহযোগিতা করতেন ইমন। তার মৃত্যুর সংবাদ কোনোভাবেই মানতে পারছেন না পরিবারের লোকজন।
ইমনের বাবা নূর ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, আমার ছেলে খুবই ভদ্র। সে কখনো নেশার সঙ্গে জড়িত ছিল না। এলাকায়ও তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তবে আমার ছেলে মদপানে মারা গেছে, এটা আমরা মানতে পারছি না।
অন্যদিকে ফরহাদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে ফরহাদ ছোট। তার বাবার কৃষি কাজে চলে তাদের সংসার। কৃষক বাবা আব্দুল জলিলকে সহযোগিতা করতে কাজের সন্ধানে প্রায় ৩ বছর আগে বাড়ি ছাড়েন ফরহাদ। এরমধ্যে দুই বছর চট্রগামে কাজ করেন তিনি। এরপর ঢাকার উত্তরায় গিয়ে কাজ শুরু করেন। সেখানে কাজের গতি ভালো না হওয়ায় গত মাস খানেক ধরে ইমনের সঙ্গে একই অফিসে চাকরি শুরু করেন ফরহাদ।
তার বাবা আব্দুল জলিল বলেন, আমার ছেলে কখনোই নেশার সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে খুবই হাস্যজ্জ্বল ছিল। প্রতি ঈদেই বাড়িতে এসে আমাদের সঙ্গে ঈদ করতো। তবে নতুন চাকরি হওয়ায় এবার আর বাড়িতে আসেনি ফরহাদ। সে বলেছিল শীতে এসে একসঙ্গে বেড়াবে। তবে এরই মধ্যে ফরহাদের মৃত্যুর সংবাদ শুনি। প্রথমে এটি বিশ্বাস হয়নি। পরে অনেকের সঙ্গে কথা বলে ফরহাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। শুনেছি আমার ছেলে নাকি মদপান করায় মারা গেছে। এই কথা আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না।
এ বিষয়ে পল্টন মডেল থানার এসআই ও তদন্ত কর্মকর্তা রাম কানাই জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করি। এ সময় ওই দুইজনের একজনের মুখে বমি ও আরেকজনের মুখে রক্ত দেখা গেছে। এরপর তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। কী কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত হতে ওই দুইজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ওই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। আপাতত এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে।