অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বুধবার, ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


মনপুরায় ঘুর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে বিধ্বস্ত পরিবারে হাহাকার মারা যাচ্ছে গবাদিপশু মাছ মিঠা পানির সংকট প্রকট ছড়িয়ে পড়ছে পানি বাহিত নানা রোগ


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫ই জুন ২০২৪ রাত ০৯:৩৩

remove_red_eye

২০৭

                  মনপুরায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়
 
       
হাসিব রহমান, মনপুরা থেকে ফিরে : ঘুর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে ভোলার সাগর মোহনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার বিধ্বস্ত এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ঝড়ের ৯ দিন পেড়িয়ে গেলেও বহু বিধ্বস্ত পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই তাদের ঘর তুলতে পারে নি। কারণ তারা এখানো ঘর মেরামত করা মতো কোনো সহায়তা পায়নি।ঘর তোলার মতো সামথ্যও তাদের নেই। যে কারণে তারা এখনো ঘুড়াতে দাঁড়াতে পারে নি। তারা এখনো খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। এদিকে জলোচ্ছাসের সময় ভোলার উপকূলীয় চরাঞ্চল এলাকার চরে লবণাক্ত পানি ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে গবাদিপশু ও পাখি, মাছ মরে যাচ্ছে। ক্ষেতের ফসল,গাছ মরে যাচ্ছে। এখন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দুর্গত এলাকায় এখন মিঠা পানির সংকট যেমন প্রকট আকার ধারন করছে। তেমননি  ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন না করায় এখন ভোলার উপকূলে বিধ্বস্ত জনপদ মনপুরায় হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান,উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার উপর দিয়ে গত কয়েকদিন আগে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে ঘুর্ণিঝড় রেমাল। এতে করে সাগর মোহনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরার দুর্গম এলাকা লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকা এখনো বিরান ভূমি। অসংখ্য বাড়ি ঘর ধ্বংস যজ্ঞের শেষ চিহ্ন এখন দগদগ করছে। বহু পরিবারের শেষ সম্বল মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত হাঁড়িছে। এসব পরিবার গুলো এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঘড়ের এতা দিন পরেও এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। 
মনপুরা থেকে উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে সাগর মোহনার বিচ্ছিন্ন মেঘনা নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন কলাতলীত গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রাস্তার উপর দিয়ে এখনো জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ঝড়ের ৯ দিন পরও চার দিকে জমি, পুকুর এখনো তলিয়ে আছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, জলোচ্ছ্বাসের পানিতে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশের জীববৈচিত্র গবাদিপশু, হাঁস মুরগি ও মাছ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে মনপুরার বিচ্ছিন্ন কলাতলী ইউনিয়নে কোন বেড়ি বাঁধ না থাকায় প্রায় ২৬ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।  ঐ এলাকাযয় ৮/১০ পানিতে প্লাবিত হওয়ায় লবনাক্ত ডুকে পড়েছে। মিঠা পানির সংকট দেখা দেওয়ায় মানুষের নানা রোগ বালাই দেখা দিয়েছে।
কলাতলী চর মূল খাল এলাকায় ঝড়ের বিধ্বস্ত হয়েছে মাইনুদ্দিনের ঘর। ভিটার উপর ভাঙ্গাচুড়া ঘরের অবশিষ্ট পড়ে আছে। তার ৪টি গরু মারা গেছে। তার পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। কলাতলীর গোল খাল এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রহমান, মিজান, মাফিজা,ছলেমাসহ অনেক পরিবারেই মাইনুদিএনর মতো ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় একই অবস্থা। তাদের দুভোর্গের শেষ নেই। তাদের নতুন করে ঘর তোলার সামথ্য নেই। তারা মাত্র ১০ কেজি সরকারি ত্রাণ ছাড়া আর কোন সহায়তা পায়নি। 
কলাতলী ইউনিয়নের চেয়রম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার জানান, কয়েক দিনের আগের জলোচ্ছ্বাস এ ৩ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। লবনাক্ত পানিতে সব চাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা।  সেখানে এখন আর কোন ফসল করার অবস্থা নেই। সেখানে রয়েছে মাত্র ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র। তাই দ্রুত একটি বেড়িবাঁধ  ও পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র  দিয়ে এলাকার  প্রায় ২৬ হাজার মানুষ কে রক্ষার দাবি জানান।
শুধু কলাতলী ইউনিয়ন ই নয়।  মনপুরা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে আরো বিভিন্ন এলাকায় লবণ পানি ঢুকে পড়ায় ক্ষেতের বাদাম,মরিচ সহ মিষ্টি আলু সহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 
এলাকাবাসী বলেছেন, জলবায়ু বিরূপ প্রভাবের কারণে উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা ভোলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘুর্ণিঝড় রেমালের পর এখন লবণ পানিতে এলাকার দীর্ঘ স্থায়ী বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দ্রুত এখন কযকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের ক্ষতি মুখে প[বে বলে মনে করছেন উপকূলবাসী।
এদিকে মনপুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, ঘুর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে মনপুরায় ২৪ শ ৬ টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ও ৩৩৮ টি ঘর সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত হয়েছে।  সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।   গৃহ নির্মাণের জন্য টিন ও টাকা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হচ্ছে।  এছাড়াও কলতলীর চরে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে এবং সুরক্ষিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।