অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বুধবার, ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় ৩ মাসেও চালু হয়নি ৩৪. ৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৭ই এপ্রিল ২০২৪ বিকাল ০৩:৫৮

remove_red_eye

৪৩৭

মানুষের দুর্ভোগ চরমে চালু হতে সময় লাগবে আরো ৬ মাস
 
বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক : যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ভোলার গ্যাস ভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে দ্বীপ জেলার মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যুৎ বিতরনকারী প্রতিষ্ঠান বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও কমছে না লোডশেডিং। এতে চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা। এমন অনিশ্চয়তায় কর্তৃপক্ষ বলছে মেশিন চালু করতে সময় লাগবে আরো ৬ মাস। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।
ভোলা জেলা সদরের গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহের উৎস ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি গত ২৫ জানুয়ারি মেকানিক্যাল ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন চালু করা সম্ভব হয়নি।
এতে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ৪২ কিলোমিটার দূর থেকে বোরহানউদ্দিন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ দিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম। এতেও কমেনি লোডশেডিং। তাইতো বিদ্যুতের লোডশেডিং সমস্যা নিয়ে দিন কাটছে ভোলাবাসীর।
ভোলার পরানগঞ্জ এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহক জানান, গরম শুরু হতে না হতেই ভোলায় চরম লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। ভোলার গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ প্লান্ট তৈরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ভোলার বাহিরে নেয়া হয়। অথচ আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছিনা। আমাদের উপার্জন বাহিরে মানুষ উপভোগ করতে পারছে অথচ আমরা পাচ্ছি না। ফলে প্রচন্ড গরমে বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়াসহ ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অটো ড্রাইভার ইসমাইল হোসেন বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ঠিকমত অটোরিকশা চার্জ দিতে পারছি না। চার্জ খরচ হিসেবে ১৩০ টাকা দিতে হয়। অথচ চার্জ হয় না ৫০ টাকারও। অটোরিকশা চার্জ না থাকায় রাস্তায় নামতে পারছিনা। বেটারী সমস্যা হচ্ছে। আয় রোজগার আগের থেকে অনেক কমে গেছে। পরিবার নিয়ে এখন অনেক কষ্টের দিন কাটাতে হচ্ছে।
গাজীপুর রোডের বাসিন্দা শিবলী হোসেন জানান, বর্তমানে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় আমরা চরম অশান্তির মধ্যে আছি। ঠিকমত ঘুমাইতে পারছিনা। বিদ্যুৎ গেলে আর আসতে চায় না। বাচ্চার অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তিনি আরো জানায়, ইফতারের সময় কারেন্ট চলে যায়। তারাবির সময় কারেন্ট চলে যায় এতে মানুষ অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।
ভোলা বিদ্যুৎ সরবরাহ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো¤পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, ভোলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ মেগাওয়াট। তবে চাহিদা তুলনায় বিদ্যুৎ পাচ্ছি ৬০ মেগাওয়াট। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়াতে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ভোলা সদরে কত সাত বছর ধরে লোডশেডিং না হওয়ার কারণ হচ্ছে রেন্টাল বিদ্যুৎ চালু থাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ছিল না। আমরা ন্যাশনাল গ্রীডের বাইরে ছিলাম। এখন ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ন্যাশনাল গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ নিতে হচ্ছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী লোডশেডিং করতে হচ্ছে । বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্য ১৫০ মেগাওয়াট সাব স্টেশন নির্মানে পরিকল্পনা নিয়েছে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী। এটি নির্মাণ হলে জেলায় লোডশেডিং এর সমস্যার সমাধান হবে।
৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ভোলা এর ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানান, গত ২৫ শে জানুয়ারি আমাদের ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন রেন্টাল প্লান্টটি বন্ধ হয়। এটার যান্ত্রিক ত্রুটির সারানোর জন্য যে যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেগুলো দেশের বাইরে থেকে কিনে আনার চেষ্টা করছি। আশা করি আগামী পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টটি চালু করা সম্ভব হবে। 
আর ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ভোলার ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিন মাস ধরে ত্রুটিপূর্ণ সমস্যার কারণে বন্ধ রয়েছে। ফলে সেচ মৌসুম ও গরমের কারণে ভোলাবাসি কিছুটা দুর্ভোগে পড়েছে। এই দুর্ভোগ নিরসন করার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় কে সমস্যা সমাধানের জন্য জানানো হয়েছে। আমরা আশা করি খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
২০০৯ সালে সিনহা গ্রুপ রেন্টাল পদ্ধতিতে ৩৪.৫ মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটি বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু করে। এর আগেও দুই বার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘ সময় কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিলো।
এই প্ল্যান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ১৬ মেগাওয়াট জেলা সদরে সরবরাহ করতো। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে দিতো প্রায় ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।