অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


ভোলার আদর্শ ও উন্নত গ্রাম তোফায়েল আহমেদ'র দক্ষিণ দিঘলদী


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ই জুলাই ২০২৩ রাত ১০:৫০

remove_red_eye

৭১০

মলয় দে: ভোলা উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার পেরুলেই দক্ষিণ দিঘলদী গ্রাম। এক সময়ের বিদ্যুৎবিহীন কাঁচা সড়কের এই গ্রামটির মানুষ কৃষি ও মৎসজীবি পেশার উপর নির্ভরশীল ছিল।জেলার মূল শহর থেকে এর তফাৎ ছিলো আকাশ পাতাল।কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই স্থানটি এখন আদর্শ গ্রামে পরিনত হয়েছে।গ্রামটির একাংশ ঘিরে গড়ে উঠেছে জেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সরকারি বেসরকারি নানা স্থাপনার পাশাপাশি দৃষ্টি নন্দন মসজিদ ও স্বাধীনতা জাদুঘরের পাশেই গড়ে উঠেছে বাংলাবাজার উপশহর । আর ওই এলাকা এখন গ্রামটির বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে।আর সেই গ্রামের  কৃষি ও মৎসজীবি  অধিকাংশ মানুষ এখন ঝুঁকছে ব্যবসা বাণিজ্যের দিকে।পাশাপাশি ওই গ্রামের শিক্ষিত মানুষের হার বেড়েছে কয়েক গুন।ফলে দক্ষিন দিঘলদী গ্রামটি ভোলার জেলার আদর্শ গ্রামে পরিনত হয়েছে। শুধু আদর্শ গ্রাম ই নয়। এখন উপশহর। এই উপশহরের ভিতর দিয়ে চলে গেছে ৩০ মিটার প্রশস্থ ভোলা - চরফ্যাশন মহাসড়ক।

এ গ্রামের ভিতরের রাস্তাঘাট গুলো বেশীরভাগই এখন পাকা।বিভিন্ন ধরনের যানবাহন খুব সহজেই সেই সকল রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে।আরো একটি বিশেষ বিষয় হলো সাজানো গোছানো এই বাংলাবাজার উপশহরটি ভোলা , দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন এই তিনটি উপজেলার মিলিত স্থান হওয়ায়,তিন উপজেলার মানুষই তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নেয়ার জন্য এখানে ভীড় জমায়।

এই এলাকারই কৃতি সন্তান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী এবং ভোলা -১ আসনের সাংসদ তোফায়েল আহমেদ।তার বাবা আজহার আলী ও মাতা ফাতেমা খানম।তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত। ১৯৬৮-৬৯-এ গণজাগরণ ও ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় লাভ করেন। স্বাধীনতার পর থেকে তিনি আট বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের  একজন সদস্য এবং তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।

এই গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম মিলে লোক সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস।আগে এখানকার মানুষ বেশীরভাগই কৃষি ও মৎসজীবি পেশার সাথে যুক্ত ছিলো।তবে এখন তোফায়েল আহমেদের মা ফাতেমা খানমের নামে ফাতেমা খানম কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক বিপনি বিতান, চাইনিজ রেস্তোরাঁ ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান । বর্তমানে ব্যবসায়িক কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে এই জায়গাটি ।

বাংলাবাজার ফাতেমা খানম ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক অমিতাভ অপু জানান,পূর্বের তুলনায় এখন এখানে শিক্ষিতের হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে ।এখানে রয়েছে অনেকগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল,মাদ্রাসা, ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ।এর পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা ও এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য গড় উঠেছে আজাহার ফাতেমা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।যেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি শত শত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত হবে।এখানে সব গুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই খুব কাছাকাছি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করার জন্য এদিক ওদিক ছোটার প্রয়োজন পড়ে না । অন্যদিকে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের দূরে গিয়ে কলেজে পড়ার মতো ক্ষমতা নেই এখন তাদেরকেও আর অকালে নিরক্ষরতার গর্ভে ঝড়ে পড়তে হচ্ছে না।

এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা  রফিকুল ইসলাম জানান,এই এলাকায় সাধারন মানুষের নামাজ আদায়ের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ফাতেমা খানম জামে মসজিদ। দৃষ্টি নন্দন এই মসজিদটি অনেক জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।বহুতল বিশিষ্ট, আকৃতি ও সৌন্দর্যের দিক থেকে ভোলা জেলার মধ্যে এই মসজিদটিকে  সেরা মসজিদের একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মসজিদটিকে দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসে।এক নজর দেখে নামাজ আদায় করে আবার চলে যায়।

তিনি আরো জানান,মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি বিজরিত জিনিস পত্র গুলো সংরক্ষণ  এবং সাধারন মানুষ বিশেষ করে শিশু কিশোর ও যুব সমাজের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মসজিদের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর। ত্রিভূজাকৃতির অসাধারণ অবকাঠামোর এই জাদুঘরটি দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ সেখানে ভীড় জমায়।এছাড়াও তেতুলিয়া  নদীর তীরে গড়ে উঠেছে তেতুলিয়া পর্যটন কেন্দ্র নামে একটি বিনোদন স্পট।সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য ভ্রমন পিপাষু মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসে অবসর সময়টুকু উপভোগ করতে।

এই এলাকার বৃদ্ধাদের কথা চিন্তা করে গড়ে তোলা হয়েছে ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম। সেখানে ৪০ জনের বেশী অসহায় বৃদ্ধারা থাকা খাওয়া সহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।এছাড়াও সেখানে রয়েছে, ভোলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি,যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় ও টেকনোলজি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। এ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে বিদেশগামী লোকজনদেরকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

এখানকার মানুষগুলো অনেক শান্তি প্রিয়।রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই বললেই চলে।দল মত নির্বিশেষে এলাকার সূর্য সন্তান হিসেবে তোফায়েল আহমেদকে তারা মন প্রান দিয়ে ভালোবাসে। এর কারনে রাজনৈতিক কোন দ্বিধা দ্বন্দ নেই বলা চলে।

এই এলাকার অনেক মানুষ প্রবাসী।এলাকার ভিতরে ঢুকলে চোখে পড়বে বিভিন্ন আকৃতির অনেক সুন্দর রংবেরঙের বাড়ি। বাড়িগুলোর মালিক বেশীরভাগই বিদেশে থাকে।এলাকার লোকজন অর্থনৈতিকভাবে বেশ স্বাবলম্বি তাই এখানে সুদের কারবারীর কোন অস্তিত্ব খুৃঁজে পাওয়া মুশকিল।তবে দেশের সব এলাকার মতো এখানে বিভিন্ন এনজিওর অফিস চোখে পরে।

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা নাজমুল হাসান।পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক।তিনি বিভিন্ন বিষয়ে  জানায়,সব এলাকায়ই একান্নবর্তী পরিবার কমবেশি থাকে এটা স্বাভাবিক। তবে কালের বিবর্তনে ও পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বেশীরভাগ পরিবারই এখন একক পরিবার রূপ নিয়েছে।বিভিন্ন পারিবারিক ঝগড়া বিবাদের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সমাধানের জন্য এখানকার মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের উপর নির্ভরশীল।

এখান বিচার ব্যবস্থা মূলত ইউনিয়ন পরিষদ ভিত্তিক।ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের সদস্যরা গ্রাম্য আদালতে বসে গ্রামের অভ্যন্তরিন পারিবারিক যে কোন্দলগুলো রয়েছে তা সবার সম্মতিক্রমে মিটমাট করার ব্যবস্থা গ্রহন করেন।

তিনি আরো জানান,এখানে একটি ক্লাব রয়েছে।ক্লাবের কিশোর ও যুবকেরা বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহন করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তবে ক্লাবের সদস্য নয় এমন ছেলে মেয়ের সংখ্যাই অনেক।দেশ ডিজিটালাইজড হওয়ায় এখন  স্মার্ট ফোন প্রত্যেকের হাতে হাতে। এতে করে মাঠের খেলাধুলার প্রতি তাদের আগ্রহ খুব কম  দেখা যায়।তাদের অবসর সময়টুকু মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের গেমস, ফেসবুক,ইউটিউব অথবা টিকটক ভিডিও দেখে পার করে।অতীতে এসব যখন ছিলো না এখানকার শিশু,কিশোর ও যুবকরা বিভিন্ন ধরনের দেশী বিদেশী খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের অবসর সময়টুকু উপভোগ করতো।এখন বর্তমান প্রেক্ষাপটে  সেই দৃশ্য বিরল।

দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতারুল হাসান স্বপন এই গ্রামটি সম্পর্কে বলেন,এই গ্রামটির উন্নয়নের পিছনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী এবং ভোলা ১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।তাঁর মায়ের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় এলাকাটি এখন উপশহরে পরিনত হয়েছে।
তিনি গ্রাম্য বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন,এই গ্রামের মানুষের মধ্যে  দ্বন্দ্ব বা কলহের সৃষ্টি হলে তারা সরাসরি আইনের আশ্রয় না নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য আদালতে বিচারের দাবী জানায়।বিচারের দাবীর  প্রেক্ষিতে আমি,  আমার ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন ওর্য়াডের মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে  সকলের উপস্থিতিতে ঝগড়া বিবাদের বিষয় জেনে বুঝে তা মিটিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করি।
গ্রামটির বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন,আমাদের গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম। গ্রামটি অনেক সাজানো গোছানো।এখানকার মানুষগুলোও অনেক শান্তি প্রিয়। বর্তমানে বলার মতো তেমন কোন সমস্যা আমার চোখে পড়ছে না।তবে গ্রামটিকে কিভাবে আরো সুন্দর করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।