অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪ | ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ আমি তোমাদেরই লোক


তোফায়েল আহমেদ

প্রকাশিত: ১৭ই মার্চ ২০২২ সকাল ০৭:১২

remove_red_eye

৩০৫

তোফায়েল আহমেদ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লীতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন মাতৃক্রোড়ে যে শিশু প্রথম চোখ মেলেছিল, পরবর্তীকালে সে শিশুর পরিচিতি দেশের গণ্ডিরেখা অতিক্রম করে পরিব্যাপ্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। মা-বাবার আদরের ‘খোকা’, রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সুপ্রিয় ‘মুজিব ভাই’, সমসাময়িকদের প্রিয় ‘শেখ সাহেব’ থেকে মুক্তিকামী বাঙালীর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে অর্জন করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি এবং শেষত কায়েমিস্বার্থবাদীদের প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে হয়ে ওঠেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা- ‘জাতির পিতা’, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী’। বাঙালীর জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে তাঁর নাম একাকার হয়েছে। এতো শুধু একটি নাম নয় বাঙালীর জাতীয় মুক্তির ইতিহাস। যে জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। ১৭ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিবস। দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে প্রতিবছর পালিত হয়ে থাকে। জাতির জনকের শুভ জন্মদিনে সমগ্র জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছে। ইতোমধ্যে জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ দেশব্যাপী ‘মুজিববর্ষ’ সগৌরবে পালিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের আলোয় জাতীয় দিগন্ত আজ উদ্ভাসিত।
বঙ্গবন্ধু জীবনব্যাপী একটিই সাধনা করেছেন, বাঙালীর মুক্তির জন্য নিজকে উৎসর্গ করা। ধাপে ধাপে প্রতিটি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ’৪৮ থেকে ’৫২ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন, ’৫০ থেকে ’৫৪ জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, ’৫৪ থেকে ’৫৬ সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন, ’৬৪তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতা, ’৬৬তে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্থাৎ স্বাধিকার তথা ৬ দফা, ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকূপ থেকে মুক্তমানব হয়ে বেরিয়ে এসে সার্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি আদায় ও সংখ্যাগুরুর অধিকার আদায় এবং ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভূমিধস বিজয় অর্জন ও পরিশেষে ’৭১-এ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক এই পর্বগুলো সংঘটনে তাঁকে জীবনের প্রায় ১৩টি বছর কারান্তরালে কাটাতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিকামী মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘It is said that no one truly knows a nation until one has been inside its jails.’ অর্থাৎ ‘বলা হয়ে থাকে যে, সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না, যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দী থাকে।’ ২০১২তে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সরকারী সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা যাই এবং রোবেন আইল্যান্ডে নেলসন ম্যান্ডেলার কারাকক্ষ পরিদর্শন করি। এখানেই আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকেও মিয়ানওয়ালি কারাগারে এ রকম একটি নির্জন কক্ষে বন্দী রাখা হয়েছিল। এই বন্দিশালাতেই নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর দীর্ঘ ২৭ বছর কারাজীবনের ১৮ বছর বন্দী ছিলেন। স্বচক্ষে দেখেছি বন্দীশালার নির্জন সেলটি। যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে কারাবন্দী ম্যান্ডেলার বিছানার জন্য একটি ও গায়ে দেয়ার জন্য আরেকটি কম্বল, একটি প্লেট, গ্লাস ও জগ। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটি পড়ে জেনেছি কারারুদ্ধ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সম্বল ছিল একটি থালা, বাটি, গ্লাস আর কম্বল। প্রকৃতপক্ষে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির শিরোনাম তিনি দিয়েছিলেন ‘জেলখানার সম্বল থালা বাটি কম্বল।’ এখানে গিয়েই বার বার আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগার এবং পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের কথা ভেবেছি- যে কারাগারে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘকাল বন্দীজীবন অতিবাহিত করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সম্মেলনে গিয়ে মিয়ানওয়ালি কারাগারের প্রিজন গবর্নর (জেল সুপার) হাবীব আলীর কাছ থেকে বর্ণনা শুনেছি, জেলের সামনে কবর খুঁড়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী অথবা কবর বেছে নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কবরকেই বেছে নিয়ে বলেছিলেন, ‘যে বাংলার আলো-বাতাসে আমি বর্ধিত হয়েছি, মৃত্যুর পর এই কবরে না, আমার লাশ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও।’ জাতির পিতা সাড়ে ৯ মাস পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের নির্জন সেলে বন্দী ছিলেন। মিয়ানওয়ালি কারাগার ভিন দেশে হওয়ায় আমরা তা সংরক্ষণ করতে পারিনি। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষে তিনি বন্দী ছিলেন সেসব সংরক্ষণ করা হয়েছে। আগরতলা মামলায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের যেখানে তিনি বন্দী ছিলেন সেটিও জাদুঘর করা হয়েছে। মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গকারী নেতৃত্বের রয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত আদর্শিক মিল। যেমন ’৭১-এর ৪ মার্চ বাঙালীর সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতির জনক বলেছিলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকার করা ছাড়া কোনদিন কোন জাতির মুক্তি আসে নাই।’ তদ্রুপ দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘জনগণের মুক্তির জন্য অবশ্যই সবকিছু ত্যাগের জন্য প্রকৃত নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন, ‘মানুষকে ভালবাসলে মানুষও ভালবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত।’ ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি দেশের মানুষকে ভালবাসি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তাদেরকে খুব বেশি ভালবাসি।’
’৬৭-এর ১৭ মার্চ নিজের জন্মদিনে কারাগারের রোজনামচায় লিখেছেন, ‘আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনদিন নিজে পালন করি নাইÑ বেশি হলে আমার স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বোধ হয়, আমি জেলে বন্দী আছি বলেই। ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস’।’ পৃষ্ঠা-২০৯। মনে পড়ছে ’৭১-এর রক্তঝরা মার্চের ১৭ তারিখের কথা। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন ছিল। দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে তখনকার প্রেসিডেন্ট ভবন অর্থাৎ পুরাতন গণভবন সুগন্ধা থেকে দুপুরে যখন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ফিরে এলেন তখন বিদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচেয়ে বড় ও পবিত্র কামনা কী?’ উত্তরে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি।’ এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে বেদনার্ত স্বরে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোন মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি।’ জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে আসা জনসাধারণকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে আবৃত্তি করে বলতেন, ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।’
বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সময়োপযোগী। সেই কবে ১৯৬৬তে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়ে হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন। সেই সম্মেলনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ২০ মার্চ পল্টন ময়দানের বক্তৃতায় বলেছিলেন ‘৬ দফা কর্মসূচী নিয়ে অনেকের কাছে গিয়েছি, কেউ আমাকে সমর্থন করে নাই।’ কবিগুরুর গান থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...।’ আরও বলেছিলেন, ‘আমার দলের নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছবোই।’ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। বার বার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেয়ার সমস্ত ষড়যন্ত্র আইয়ুব খান গ্রহণ করেছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সরকারী নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা। স্বৈরশাসক তাঁকে প্রধান আসামি করে ফাঁসিকাষ্ঠে দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু মাথা নত করেননি। এ দেশের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির পিতার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিল। সেই গণআন্দোলন প্রবল গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত করে এবং কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) গণসংবর্ধনায় জাতির পিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই বাঙালীর বন্ধু তথা ‘বঙ্গবন্ধু’। ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘আই ফিল ফর মাই কান্ট্রি এ্যান্ড মাই পিপল, এ্যান্ড দ্যান মাই ফ্যামিলি।’ সবকিছুর উর্ধে জাতির পিতার কাছে ছিল বাঙালী ও বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন বিশে^র নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা। যেখানেই মুক্তিসংগ্রাম সেখানেই তিনি সমর্থন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা যায় ভারতের মহাত্মাগান্ধী, আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটোর সঙ্গে। তাদের সমকক্ষ নেতা ছিলেন তিনি। পৃথিবীতে অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে আলোচনার টেবিলে বসে। আর বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাঁর জীবনকে বাঙালী জাতির জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা যেমন বলেছিলেন, ‘যে মরতে চায়, তাঁকে কেউ মারতে পারে না।’ বঙ্গবন্ধ্ওু বলেছিলেন, ‘যে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, তাঁর মৃত্যু নাই।’ বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের একজন মহান নেতা, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। একবার যে সিদ্ধান্ত নিতেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও আপোস করতেন না।
’৭২-এর ১০ জানুয়ারি বন্দীদশা থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে রেসকোর্স ময়দানের সর্বকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্রে হৃদয়ের অর্ঘ্য ঢেলে আবেগমথিত ভাষায় বলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় বলব, আমি বাঙালী, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’ স্থির-প্রতিজ্ঞ থেকে বলেন, ‘ভাইয়েরা, তোমাদেরকে একদিন বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। আজকে আমি বলি, আজকে আমাদের উন্নয়নের জন্য আমাদের ঘরে ঘরে কাজ করে যেতে হবে।’ সেদিন বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয় ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।’ বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি ধাপেই বাঙালীর সার্বিক মুক্তির জয়গান গেয়েছেন।
দুটি মহান লক্ষ্য সামনে নিয়ে জাতির জনক রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অপরটি অর্থনৈতিক মুক্তি। প্রথম লক্ষ্য পূরণ করে যখন দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। জাতির জনকের দুই কন্যা তখন বিদেশে অবস্থান করায় রক্ষা পান। জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক আওয়ামী লীগের রক্তে ভেজা সংগ্রামী পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একের পর এক লক্ষ্যপূরণ করে চলেছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানেও বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ হবে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি