অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ | ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


ভোলায় জোয়ারের পানি কমলেও নিম্নঞ্চলে মানুষের দুর্ভোগ


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮শে মে ২০২১ রাত ১১:৫৬

remove_red_eye

৪৮৫

জোয়ারের পানিতে  লবনাক্ততা

হাসিব রহমান : কেউ হারিয়েছে ঘর বাড়িসহ ভিটা মাটি । আবার কেউ বা দোকান পাট, পুকুরের মাছ,গবাদিপশু। সব কিছু হারা মানুষ গুলোর এখন দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে। জোয়ার এলেই কেউ অআশ্রয় নেয় উচু স্থানে। কেউ বা অন্যের বাড়িতে। এই চিত্র বর্তমানে ভোলার চরফ্যাসনের কুকরি মুকরি,ঢাল চর, পর পাতিলা,মনপুরার কলতলিসহ বহু দুর্গম চরে।  ভোলার নিন্মাঞ্চলের দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ এখনো কাটছেনা। জোয়ারের পানি কমতে শুরু করলেও ঘুর্নিঝড় ইয়াসের আঘাতে লন্ডভন্ড অবস্থায় রয়েছে ভোলার দুর্গম বঙ্গোপসাগর মোহনার  চরফ্যাসন উপজেলার জনপদ কুকরি মুকরি,চরপাতিলা,ঢালচরসহ বহু এলাকা। বিধ্বস্ত এসব জনপদে জেয়ারের পানিতে দেখা দিয়েছে লবনাক্ততা। এতে করে পুকুরের মাছ ও গবাদি পশু আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে কুকরি মুকরিতে।  এদিকে আজ শুক্রবার সকাল থেকে ছিলো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবারের চেয়ে  শুক্রবার মেঘনা নদীর পানি দের ফুট উচ্চতা কমেছে। কিন্তু মেঘনা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল আকতার।
চর পাতিলার হাসেম হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, মেঘনার জোয়ারের পানির আঘাতে তার  ঘরসহ মালামাল ভাসিয়ে নেয়। এর পর তার স্ত্রী রোসনা বিবিকে নিয়ে আশ্রয় নেয় ছেলে নিজাম হাওলাদারের ঘরে। ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার নিজামের ঘরের ভিটিসহ একাংশ জোয়ারে ভেসে গেছে। চার দিকে থৈ থৈ পানির মাঝে কোন রকমে ঘরে মাঁচা করে থাকছেন তারা সবাই।  নিজাম ছাড়াও রোসনা বিবির আরও ৫ ছেলে বারেক হাওলাদার, বাদশা, বশির, কাদের ও কাজল একই এলাকায় বসবসাস করেন। সবার ঘরের মাটি জোয়ারে ভেসে গেছে। পানিতে তলিয়ে ছিলো তিন দিন। খাল, বিল সব নোনা পানিতে তলিয়ে থাকায় খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। হাসেম হাওলাদার পরিবারের মতো বহু পরিবারের এখন এমন করুন অবস্থা চর পাতিলা,ঢাল চর সহ বিভিন্ন দুর্গম চলাঞ্চলে।
 বিধ্বস্ত এলাকার মানুষ বলছে,জরুরী পুনর্বাসন ছাড়া বিধ্বস্ত পরিবার গুলোর পক্ষ ঘুরে দাড়ানো সম্ভব নয় ।  ভোলার চরফ্যাসন উপজেলারর চর কুকরি মুকরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হাসেম মহাজন জানান, তার ইউনিয়নে বিধ্বস্ত এসব জনপদে জেয়ারের পানিতে দেখা দিয়েছে লবনাক্ততা। এতে করে এক দিকে যেমন বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। তেমনি কুকরি মুকরিতে লবনাক্ত পানির কারনে পুকুরের মাছ ও গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। তার ইউনিয়নের সব চাইতে ক্ষতি হয়েছে চর পাতিলা গ্রামে। সেখানে  শতাধিক ঘর বাড়ি সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়। এছাড়াও আংশিক ক্ষতি হয়ে ২ শতাধিক ঘর বাড়ি। এ পর্যন্ত প্রশাসনের কাছ থেকে শুধু মাত্র শুকনো মুড়ি শুকনো খাবার তার পেয়ে বিতরণ করেছে। এছাড়া ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে যাদের তার জন্য কোন কিছুই এখনো পায়নি বলেও জানান। ঢাল চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, বাতাস কিছুটা কমেছে। রাতে জোয়ার কম হয়েছে। দিনেও জেয়ার কম হবে বলে তিনি আশা করেন। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরী করছেন তারা। পানি কমলেও গবাদি পশু গরু ছাগল, মহিষ হাঁস মুরগির সব চাইতে ক্ষতি হয়েছে।  ভোলার মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের প্যানেল  চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টিটু ভূইয়া জানান, শুধু তার ইউনিয়নে ৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের দ্বায়িত্বে থাকা জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো: মোতাহার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ভোলা জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার ৩’শ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ি-ঘরেরই আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তাদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঝড়ে নিহত ১জনের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। ঘর বাড়ি হারানো বিধ্বস্ত পরিবার গুলোর পুর্নবাসনের জন্য  ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মধ্যে নগদ অর্থ ও ঢেউ টিন বিতরণ করা হবে। ভোলা জেলা প্রশাসক মো: তৌফিক ই লাহী চৌধুরী জানান, তারা ক্ষত্রিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। এছাড়া দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে ভোলার মনপুরায় নৌ বাহিনীর সদস্যরা জাহাজ নিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এ ক্ষতিগ্রস্ত ৬০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত  পরিবার গুলোকে চাল, ডাল, চিনি, তেল, আটা, ছোলা ও লবণসহ বিভিন্ন সামগ্রী  বিতরণ করেন। এছাড়াও শুক্রবার দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে ঝড়ে ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত আড়াই হাজার পরিবারের মাঝে চিনি,চিড়া,বিশুদ্ধ পানির বোতল,সাবান,বিস্কুট ও তারপলিন বিতরণ করা হয়।