অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪ | ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


চরফ্যাশন হাসপাতালে রোগী নিয়ে দালালদের টানাহেচড়া


চরফ্যাসন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩শে জানুয়ারী ২০২১ রাত ১০:১৯

remove_red_eye

৪৯৭


এআর সোহেব চৌধুরী ,চরফ্যাশন থেকে : নামে বেনামে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক ও বেসরকারী ক্লিনীকের দালালদের হাকডাক ও টানাহেচরায় রোগী ও রোগীর স্বজনদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে। নিত্য দিনের এমন ঘটনা উপজেলাবাসীর জন্য বেশ সাধারণ ঘটনা হলেও নানান রকমের বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের পরিবার পরিজনদের। তবুও টনক নড়ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের। জরাজীর্ণ ৫০ সয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি প্রায় ১২কোটি টাকায় নব নির্মিত ১০০ সয্যা হাসপাতালে উন্নিত হয়েও সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে অনুমোদন বিহীন বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারসহ ওষুধ ফার্মেসীর দালালদের জন্য। এমনটাই বলছেন দূর,দূরান্ত থেকে আগত চিকিৎসা প্রার্থীরা।


 চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন জিয়াউল হক বলেন, চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যুগযুগ ধরে উপজেলার ৭লাখ মানুষকে প্রশংসার সহিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। অথচ এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য সাম্প্রতীক সময়ে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি রোগী ধরার দালাল নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থ হচ্ছে। রোগীর ওই স্বজন ক্ষুব্ধ হয়ে আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি চিকিৎসা সেবা দিবেন তাড়াতো বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিকে চেম্বার করার অপেক্ষায় থাকেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আবদুল্লাহপুরের বাসীন্দা সেলিনা আকতার (৩২) বলেন, জরুরী বিভাগে টাকা ছাড়া মেলেনা সেবা। আমার ছেলের চিকিৎসা করেই বলেন, হাসপাতালে ওষুধের  সাপ্লাই নেই বাহির থেকে কিনতে হবে বলে দালালের হাতে কাগজ লিখে ওষুধ আনান। পরে ওই দালালকে বাড়তি টাকাও দিতে হয়। এছাড়াও জরুরী বিভাগের সেবাদানকারীরাও হাত পেতে ২শ টাকা নেয়। এমন যদি হয় সরকারী হাসপাতালে তাহলে আমরা কোথায় যাব।
ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, আমার বড়ো বোনকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষা দিলেন। বোনকে নিয়ে যাওয়ার পথে ডায়াগণস্টিকের কিছু লোক আমাদের টানাহেচরা শুরু করলে বেগতিক অবস্থায় পড়তে হয় আমাদের। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নিরোবতাও এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উপজেলা মাসিক শৃঙ্খলা বিষয়ক আলোচনায় যদি দালাল ও বেসরকারী ডায়াগণস্টিক সেন্টারসহ সিজারে অনুনোমদিত বেসরকারী ক্লিনীকের এজেন্টদের বিষয়ে কথা বলতেন এবং প্রশাসন যদি হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালাত তাহলে আজ রোগীদের এতো টানাহেচড়ায় পড়তে হতোনা।
উপজেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইয়াহ ইয়া ইসলাম মনির বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এ হাসপাতালে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও এখানে সিজারের রোগীর কোনো সিজার হয়না। অথচ নামে বেনামের অনুমোদন বিহীন বেসরকারী হাসপাতালে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ টা সিজার হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ক্লিনিকে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা বাড়িয়ে দিলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষীত প্রত্যেক নাগরিকের দোড়গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌছে যেত।
এবিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শোভন কুমার বোশাক বলেন, হাসপাতাল বাউন্ডারির বাহির থেকে কিছু রোগী ধরার দালাল আসে। এসব দালালদের বিরুদ্ধে রোগী ও রোগীর পরিবারকে বিভিন্ন হয়রানিসহ রোগীদের নিয়ে টানাটানি করার মতো তথ্য রয়েছে। এদের লিস্ট করা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযান দিয়ে আটক ও জরিমানা করা হয়েছে। এবং খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হবে।