অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪ | ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


১৫ বছরেও ঘূর্নিঝড় সিডরের দুর্বিসহ স্মৃতি ভুলেনি উপকূলের মানুষ


অচিন্ত্য মজুমদার

প্রকাশিত: ১৫ই নভেম্বর ২০২০ সকাল ০৯:০১

remove_red_eye

৩৩৪

অচিন্ত্য মজুমদার:  ভোলার উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলংয়নকারী ২০০৭ সালের সেই ঘূর্নিঝড় সিডরের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সেই দুর্বিসহ স্মৃতি ভুলতে পারছেনা মানুষ। সিডরের কথা মনে করে এখনও আতকে ওঠেন তারা। স্বজন হারনোর ব্যাথা কাদায় তাদের। সিডরে নিখোজ ভোলার ১৫ জেলে আজও ফিরে আসেনি। তাদের ফিরে পাওয়ার প্রতিক্ষা প্রহর গুনছেন স্বজনরা।

জানা গেছে, সিডরের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ভোলার উপকূলের মানুষ এখনও অরক্ষিত। এখনও ঝড়ের পূর্বাভাস পান না তারা। তাদের জন্য নির্মান করা হয়নি পর্যপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র। এক এক করে পেরিয়ে গেছে ১৩ বছর। সিডরের সেই দিনের কথা আজও কাদায় উপকূলবাসীকে। কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা, কেউ সন্তান, কেউ বা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিতে হারিয়ে পথে বসেছেন। কেউ বা সিডরে নিখোঁজ সন্তানদের ফিরে আসার প্রতিক্ষায়। কিন্তু তারা ফিরে আসবে কিনা তা জানা নেই কারো।

সিডরে নিখোঁজ চন্দ্র প্রসাদ গ্রামের লোকমান হোসেন পিতা আব্দুর রশিদ, সিডরের সময় নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি লোকমান। সে বেচে নাকি মরে গেছে তা জানেন না তারা। এখনও ফিরে আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে নিখোঁজ আবদুল জলিলের পরিবার ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সিডরের সেই ভয়ংকর ঝড়ে উপকূলীয় জেলা ভোলায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এখানে ৫২ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। নিহত হয় ৪২ জন। ৫ কিলোমিটার  বেড়িবাধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া  কয়েক কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। ওই ঝড়ের পর থেকে এখনও নিখোঁজ ১৫ জেলে। ১৩ বছরেরও তারা ফিরে না আশায় তাদের সলিল সমাধির আশংকা করছেন সঙ্গীয় জেলেরা। সিডরে জেলা সদর, চরফ্যাশন, মনপুরা ও বোরহানউদ্দিনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
 
সিডরে লন্ড ভন্ড ভোলার সদরের চন্দ্র প্রসাদ গ্রামে এখনও চলছে শোকের মাতম। সন্তানহারানো ব্যাথা ভুলতে পারছেন না তারা। দৌড়া-দৌড়ি ছুটা-ছুটি করে কেউ প্রাণ রক্ষা পেলেও সিডরের কথা মনে করলেই আতকে উঠেন তারা। ক্ষতিগ্রস্থ নি:স্ব অনেক পরিবার গৃহ নির্মান করতে না পেরে ঝুপড়ি ঘরে বেড়িবাধে আশ্রয় নিয়ে বছরের পর বছর পার করছেন তারা। সিডরের বর্ণনা করতে গিয়ে তারা যেন আতংকিত।

প্রত্যক্ষদর্শী মালেক, শাজাহান, বিবি আসমা বলেন, ঝড় শুরু হওয়ার সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে বাচার জন্য যুদ্ধ করি। কারো কারো প্রাণ রক্ষা হলেও মারা যান ৩ জন। তাদের পরিবারে এখনও শোক চলছে।

এদিকে, ভোলার উপকূলের উপর দিয়ে সিডর-আইলার মত ঘূর্ণি ঝড় বয়ে গেলেও উপূলের মানুষের জন্য নির্মান করা হয়নি পর্যপ্ত সাইক্লোন সেল্টার। ঝড় এলেই উপকূলবাসীর খবর নেয় প্রশাসন থেকে গণমাধ্যম কর্মীরা। আর বাকি সারা বছর এদের কথা ভাবেনা কেউ।