অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ | ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


ভোলায় ২০ বছর ধরে শেকলে বন্দী জীবন , শেকলই 'শত্রু'


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩০শে মার্চ ২০২০ ভোর ০৫:০৮

remove_red_eye

৫০৭

আকতারুল ইসলাম আকাশ: দুই যুগ ধরে শেকলবন্দি ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের মেদুয়া গ্রামের আব্দুল রশিদ ঢ়াড়ী। বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচে কৈশোর-যৌবন, আর অসংখ্য শীত-বর্ষা কাটিয়ে এখন জীবনের শেষবেলা তার। ছাড়া পেলেই সে হিংস্র হয়ে ওঠে, তাই মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকটিকে শেকলে বেঁধে রেখে দায়িত্ব শেষ করেছেন সবাই। গত ২০টি বসন্তে এই শেকলটি তাই রশীদের সবচেয়ে বড় বন্ধু আবার সবচেয়ে বড় শত্রুও।
 
মূলবাড়ির ভেতরে টানা-টানা লম্বা দুটি দোচালা ঘরে পার্টিশন দেয়া খোপ খোপ ঘরগুলোতে বাস করে দুই ভাইয়ের পরিবার। মাটি-লেপা পরিচ্ছন্ন বড় উঠানের পশ্চিমে গাছ-গাছড়ার ঝাড়-জঙ্গল। মাথার সিঁথির মতো মেঠো পথ ধরে এগিয়ে যেতেই পায়ে বাঁধা শেকল ধরে প্রাণপণ টানাটানি করতে দেখা গেলো মধ্যবয়স পেরুনো লোকটিকে।
 
শেকলের আরেকটি প্রান্ত বাঁধা স্কুলের বিমের সঙ্গে। শিকল ছিড়ে মুক্ত হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা তার সফল হয়নি ২০ বছর ধরে। শেকলের বৃত্তের ভেতরই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় তাকে, সেখানেই তার আহার-নিদ্রা। তার কাছাকাছি যায় না কেউ। মাঝেমধ্যে দূর থেকে লম্বা লাঠি দিয়ে ঠেলে দেয়া হয় ভাতের থালা।
  
সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক আকতারুল ইসলাম আকাশ। শোনা যাক তার মুখ থেকেই। 
 
সাহস করে কাছে গেলাম। হাত বাড়িয়ে দিতে হ্যান্ডশেক করেন শেকলবন্দী রশীদ। কেমন আছেন? জানতে চাওয়ায় বিড়বিড়িয়ে শুধু বললেন, আমি বাড়িতে যামু...!!! 
 
পরিবারের সদস্যরা জানান, তার বয়স যখন ৮ বছর। তখন তার মা এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। তখন মায়ের পিছু পিছু ধান ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে রওনা হন রশিদ। তবে দুর্ভাগ্য কিছু পথ যাওয়ার পরেই পিছন থেকে এক বিষাক্ত সাপ কামড় দেয় তাকে। আর সেখান থেকেই তার সমস্ত দেহে প্রবেশ করে বিষ। আর সেই বিষেই বিষাদ হয় তার জীবন। মাঝেমধ্যে ভালো থাকলেও আজ প্রায় ২০ বছর ধরে ভালো হচ্ছেন না তিনি। সুযোগ পেলেই সামনে যা পান তা নিয়ে তাড়া করেন। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালায় লোকজন। তার হাতে আহত হয়েছেন অনেকে। যাদের মধ্যে পরিবারের দুই নারীও আছেন। তার হাত থেকে রক্ষা পায় না গরু ছাগলও। গরু ধরে লেজ কাটা, ছাগলের পা কাটা, ডানা ধরে হাঁস-মুরগী ছিঁড়ে ফেলা ছিলো তার প্রতিদিনের কাজ। তাই বাধ্য হয়েই বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে জানায় পরিবারের সদস্যরা।
 
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, জনপ্রতিনিধি-হাসপাতালসহ সবখানেই ধর্ণা দিয়েও প্রতিকার সমাধান পাননি। তবে পরিবার আশায় বেঁধেছে দিন। কেউ যদি অর্থ দিয়ে সাহায্য করত রশীদ ঢ়াড়ীকে। তাহলে হয়তো সুস্থ মস্তিষ্কে বেঁচে থাকত আব্দুল রশিদ।